গাজা সিটি দখলের পথে ইসরায়েল, এ পর্যন্ত নিহত ৬২৬২২ জন
ফিলিস্তিনের গাজা দখলে নিতে উপত্যকাটির সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র গাজা সিটির উপকণ্ঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। স্থল অভিযান জোরদার করে এখন উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে সেনারা। পাশাপাশি তীব্রতর হয়েছে বিমান-ড্রোন ও বোমা হামলাও।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে আল জাজিরা জানায়, শনিবার (২৩ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৬১ জনের মরদেহ এবং ৩০৮ জন আহত ফিলিস্তিনিকে হাসপাতালগুলোতে আনা হয়েছে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু যুদ্ধে গত ২২ মাসে প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার ৬২২ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৫৭ হাজার ৬৭৩ জন। এছাড়া ইসরায়েলের চাপিয়ে দেয়া অনাহার ও অপুষ্টিতে দুজন শিশুসহ আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে জাতিসংঘ ঘোষিত পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষাবস্থার শিকার হয়ে মোট মৃত্যু ঘটেছে ২৮১ জনের, যাদের ১১৪ জনই শিশু।
গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নিতে বুধবার (২০ আগস্ট) ভোর থেকে ‘গিডিয়নের রথ-২’ নামে চূড়ান্ত সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এর প্রস্তুতি হিসেবে ১১ আগস্ট থেকে ১০ দিন ধরে বিস্তৃত অভিযান চালানো হয়। ওই সময়কালে ভারী বোমাবর্ষণে শহরটির ঘর-বাড়ি ‘পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস’ এবং আশ্রিতসহ প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছে সেনারা। আইডিএফ বলছে, এটি শহর দখলের প্রথম ধাপ।
এদিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদনের পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরও ৬০ হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে আহ্বানের আদেশ পাঠাতে শুরু করেছে। গাজা সিটিতে যুদ্ধ করতে ওই ৬০ হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে ডাকবে এবং যুদ্ধরত নিয়মিত সৈন্যও বাড়ানো হবে বলে আগেই জানিয়েছিল আইডিএফ।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র এফি ডেফ্রিন জানান, সৈন্যদের একত্রিত করা ২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হবে। আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ‘কয়েক মাস ধরে চলা দীর্ঘস্থায়ী অভিযানের’প্রস্তুতিতে সেনাবাহিনীর রিজার্ভ সৈন্যের সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারে উন্নীত হবে। এ লক্ষ্যে অতিরিক্ত ৬০ হাজার রিজার্ভ সেনা ডাকা হয়েছে এবং কয়েকটি ব্যাটালিয়নের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে গাজা সিটির উত্তরাঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে নতুন নির্দেশ জারি করা হয়েছে।
এর আগে আল-সাবরা ও আল-জায়তুনে এ ধরনের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। তবে সেনাপক্ষ দাবি করছে, অভিযানের মধ্যেও সীমিত আকারে মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে মুখপাত্র বলেন, ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতে। আমরা অভিযানের লক্ষ্য পূরণে প্রস্তুত এবং নির্দেশ পেলেই হামাসকে আরও বড় ক্ষতি করতে পারব’।
আল-আহলি আরব হাসপাতালের সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, শনিবার ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহতদের ১৬ জন ও আহতদের ১১১ জন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে সাহায্যপ্রার্থী ছিলেন। তাদের অধিকাংশই রাফাহের উত্তরের সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এর ফলে ২৭ মে ইসরায়েল মার্কিন-ভিত্তিক জিএইচএফের মাধ্যমে নতুন সাহায্য বিতরণ ব্যবস্থা চালুর পর থেকে নিহত ত্রাণপ্রার্থী দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৭৬ জন, আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ৩০৮ জনেরও বেশি।
এছাড়া বাস্তুচ্যুত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা ও গোলাবর্ষণে দক্ষিণ গাজার আসদা এলাকার একটি তাঁবুতে ১৭ জন, মধ্য গাজার মাগাজি এলাকার একটি তাঁবুতে দুজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গাজার জরুরি ও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা জানিয়েছে, দক্ষিণ গাজার মাওয়াসি আল-কারারা এলাকায়ও বাস্তুচ্যুতদের আবাসস্থলে একটি শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনী ড্রোন থেকে বোমা হামলা চালালে আহত হন বেশ কয়েকজন।
আল-শিফা মেডিকেল কমপ্লেক্স হাসপাতালও গাজা শহরের দক্ষিণে ইসরায়েলি কামান হামলায় একজন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে