গাজা সিটির আরও এলাকা দখল ইসরায়েলের, বাস্তুচ্যুত সাড়ে তিন লাখ ফিলিস্তিনি
গাজা সিটির আরও ভেতরে ঢুকে পড়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি উপত্যকা গাজার সবচেয়ে বড় নগরীটির উত্তর-পশ্চিমে নতুন পাড়াগুলোতে অগ্রসর হয়েছে ট্যাঙ্কসহ সামরিক যানবাহনগুলো। ইসরায়েলি এই স্থল অভিযানের মুখে তিন লাখ ৫০ হাজার ফিলিস্তিনি পালিয়ে যেতে পারলেও আটকা পড়ে আছেন আরও সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকে ইসরায়েলি ট্যাঙ্কগুলো আল-সাফতাওয়ি পাড়া ও জালা স্ট্রিটের শেষের দিকে কয়েকশ মিটার ভেতরে ঢুকে পড়েছে। বুলডোজারসহ ভারী যন্ত্রপাতিবাহী যানবাহনও কারামেহ টাওয়ার পাড়া ও মুখাবারাত জেলার চারপাশে অভিযান চালিয়েছে। একইসঙ্গে পুরো গাজাজুড়েই হামলা চালিয়ে আরও অন্তত ২৯ জনকে হত্যা করেছে সেনারা, যাদের ১৯ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। আল-সাফতাওয়ি পাড়া ও জালা স্ট্রিটের শেষ প্রান্তে অবস্থানরত সামরিক যানবাহনের ছবি ও ফুটেজ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীও।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, উত্তর গাজার দশ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণ-পশ্চিমে তাড়াতে শহরটিতে ভারী বোমাবর্ষণ এবং জোরপূর্বক উচ্ছেদে নজরদারি ড্রোন দিয়ে ক্রমাগত হুমকি ও বারবার সতর্ক করে যাচ্ছে ইসরায়েল। তবে, যারা দক্ষিণের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে পেরেছেন, তাদেরকেও খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের ব্যাপক ঘাটতিতে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে বিতাড়িত মানুষে ভরা দক্ষিণের অতিরিক্ত জনাকীর্ণ আল-মাওয়াসি ক্যাম্পেও বোমা মেরেছে ইসরায়েল। ফলে যারা গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন, তাদের দক্ষিণেও কোনো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই। গাজার গণমাধ্যম অফিস জানায়, আল-মাওয়াসিতেও ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে আবার উল্টো পথে গাজা সিটিতে ফিরেছেন অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।
তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু নিউজ জানায়, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আবারও ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েল পুরো উপত্যকাটি ফের দখল করবে। এরই প্রথম ধাপ হিসেবে গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেয়া হবে। তবে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) স্বীকার করেছে, গাজা সিটি পুরোপুরি দখলে তাদের ‘কয়েক মাস’ সময় লাগবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজও সতর্ক করে দিয়েছেন, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস যদি নিজেদের নিরস্ত্র না করে এবং সমস্ত জিম্মিকে মুক্তি না দেয়, তাহলে স্থল হামলা বাড়িয়ে শহরটি ধ্বংস করে দেবে সেনাবাহিনী।
৮ আগস্ট ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পরিকল্পনা অনুমোদনের পর ৩ সেপ্টেম্বর থেকে চলমান ‘গিদিয়নের রথ ২’ নামের এই সমন্বিত অভিযান। ইসরায়েলি সেনাদের বৃহত্তর এই হামলাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন।
বুধবারের বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা দুদিনের গাজা সিটিতে ১৫০টিরও বেশি বিমান ও কামান হামলা চালিয়েছে। একজন সেনা কর্মকর্তা দাবি করেন, শহরটির ১০ লক্ষাধিক বাসিন্দার প্রায় তিন লাখ ৫০ হাজার বা ৪০ শতাংশই শহরটি ছেড়েছেন। তবে, গাজার সরকারি গণমাধ্যম অফিস জানায়, সমান সংখ্যক ফিলিস্তিনি শহরের কেন্দ্র ও পশ্চিম অংশে আশ্রয় নিয়েছেন আর এক লাখ ৯০ হাজার সম্পূর্ণভাবে গাজা সিটি ছেড়েছেন। রাফাহ ও খান ইউনিস থেকে বিতাড়িত মানুষে ভরা দক্ষিণের অতিরিক্ত জনাকীর্ণ আল-মাওয়াসি ক্যাম্পেও বোমা মেরেছে ইসরায়েল। ফলে যারা গাজা সিটি ছেড়ে পালাচ্ছেন তাদের দক্ষিণেও কোনো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নেই।
গাজার গণমাধ্যম অফিস জানায়, আল-মাওয়াসিতেও ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখে আবার উল্টো পথে গাজা সিটিতে ফিরেছেন অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর প্রায় দুবছরের কাছাকাছি সময়ে গাজায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৬৫ হাজার ১৪১ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬৫ হাজার ৯২৫ জন। এছাড়া ইসরায়েলি-সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন ৪৩২ জন, যাদের ১৪৬ জনই শিশু। এর মধ্যে জাতিসংঘ-সমর্থিত ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা (আইপিসি) গত মাসে উত্তর গাজাকে ‘দুর্ভিক্ষ অঞ্চল’ ঘোষণা করার পর থেকেই মারা গেছেন ৩১ জন শিশুসহ ১৫৪ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে