গাজা সিটি ধ্বংস করে দিচ্ছে ইসরায়েল, নিহত বেড়ে ৬৩৫৫৭ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৯৮ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হাসপাতালগুলোতে আনা হয়েছে, আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৪০৪ জন। এছাড়া চাপিয়ে দেয়া দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন তিনজন শিশুসহ আরও নয়জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে গত ২২ মাসে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৫৫৭ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬০ হাজার ৬৬০ জন। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষপীড়িত ছিটমহলটিতে অনাহারজনিত মৃত্যু ঘটেছে ৩৪৭ জনের, যাদের ১২৭ জনই শিশু।
‘হতাহত অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। ফলে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাই প্রকৃত হতাহত আরও বেশি’ হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, গাজার বৃহত্তম নগরকেন্দ্র গাজা সিটি দখল এবং সেখানকার প্রায় দশ লাখ ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করে পশ্চিম ও দক্ষিণে পাঠিয়ে দিতে গাজা শহরের ধ্বংসযজ্ঞ আরও তীব্র করেছে ইসরায়েল। বৃহত্তম স্থল অভিযানে ট্যাঙ্কের গোলা ও গুলিবর্ষণ এবং অব্যাহত বিমান-ড্রোন হামলা ও আবাসিক এলাকায় ‘বিস্ফোরক রোবট’ ব্যবহারে ফিলিস্তিনিদের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করছে তারা। এমনকি বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়স্থল শরণার্থী শিবিরের তাঁবুগুলোতেও ক্রমাগত আঘাত হানাসহ জোরপূর্বক অনাহারে রেখে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির ২৪ লাখ বাসিন্দাকে দুর্ভিক্ষের মুখেও ঠেলে দিয়েছে।
তুর্কি গণমাধ্যম আনাদোলু জানায়, ইসরায়েলের সমন্বিত হামলাগুলো গাজা সিটি দখলে ২১ আগস্ট জায়তুনপাড়া থেকে শুরু ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ ২’ অভিযানের অংশ। বৃহৎ আকারের এই অভিযান সাবরায় গিয়ে থামানোর পরিকল্পনা রয়েছে দখলদার দেশটির। ২৯ আগস্ট তেল আবিব প্রায় দশ লাখ ফিলিস্তিনির বাসস্থান গাজা সিটিকে ‘বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র’ ঘোষণা করার পর ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র গুলিবর্ষণের মুখে উত্তর-পূর্ব গাজা শহর থেকে পশ্চিমাঞ্চলে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
একসময়কার আবাসিক ভবনে পরিপূর্ণ এবং জনাকীর্ণ গাজা সিটি এখন ‘ধ্বংসস্তূপ ও জনবিরল’ নগরী বলেও জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো।
রোববার (৩১ আগস্ট) সারা দিনে নিহতদের ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলায়। বাকি ৪৬ জন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে মানবিক সহায়তা সংগ্রহে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের এলাপাতাড়ি গুলিতে মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ২৩৯ জনেরও বেশি। ফলে গত ২৭ মে ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত জিএইচএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিহত সাহায্যপ্রার্থী দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৯৪ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত ১৬ হাজার ৮৩৯ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় এখনো প্রায় ৫০ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের কথা বলেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজাজুড়ে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪২৬ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৪৮ হাজার ৬১৯ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে