পশ্চিম তীরেও আগ্রাসন বাড়াচ্ছে ইসরায়েল, এক বছরে ১০১৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

অবরুদ্ধ গাজার পাশাপাশি অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকেও ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের নতুন প্রকল্প বাস্তবায়নে এগোচ্ছে দখলদার দেশটি। এতে পশ্চিম তীরের প্রায় সাত হাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাজুড়ে সামরিক অভিযানে ফিলিস্তিনিদের হতাহত করা ছাড়াও গাজাবাসীর বাড়ি-ঘর ধ্বংস করে তাদেরকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। পাশাপাশি জোরপূর্বক অনাহারে রেখে দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। গাজা সিটি সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সপ্তাহজুড়ে নৃশংস আগ্রাসী হামলা আরও জোরদার করেছে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা যুদ্ধের দ্বিতীয় বছর থেকে পশ্চিম তীরে এক হাজার ১৪ জনকে হত্যা এবং কমপক্ষে সাত হাজার ফিলিস্তিনিকে আহত করেছে ইসরায়েলি বাহিনী ও অবৈধ বসতি স্থাপনকারীরা। এখন আবার গাজার পাশাপাশি সেখানকার আরও জায়গায় দখল স্থায়ী করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।
পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকা সংযুক্ত করতে ইসরায়েলি পার্লামেন্ট নেসেটে ই১ প্রকল্প প্রস্তাবটি পাস হয়েছিল ২৩ জুলাই। আর গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনার অনুমোদন দেন অতি-ডানপন্থী ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ, যিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে বসতি স্থাপনের কার্যক্রমও তত্ত্বাবধান করেন।
এর লক্ষ্য, মা’আলে আদুমিম এলাকার বসতি স্থাপনের আশেপাশে আরও ছয় হাজার ৯০০টিরও বেশি বসতি স্থাপনকারী ইউনিট নির্মাণ এবং এর মাধ্যমে মা’আলে আদুমিমকে জেরুজালেমে সংযুক্ত করা। রামাল্লাহ ও বেথলেহেমের মধ্যে ফিলিস্তিনি আঞ্চলিক ধারাবাহিকতা কমিয়ে পশ্চিম তীর ও জর্ডান উপত্যকার সব ইহুদি বসতিতে দ্রুত ইসরায়েলের সার্বভৌমত্ব তথা ইসরায়েলের আইন, বিচার ও প্রশাসনও সম্প্রসারিত করতে চায় দখলদাররা। এতে ইসরায়েল রাষ্ট্রের নিরাপত্তা মজবুত এবং ইহুদি জনগণের মাতৃভূমিতে শান্তি ও নিরাপত্তার মৌলিক অধিকার রক্ষা হবে বলে মনে করছে নেতানিয়াহু সরকার।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) জেরুজালেমের গভর্নরের অফিস সতর্ক করে দিয়েছে যে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের নতুন প্রকল্পটি অধিকৃত পশ্চিম তীরের প্রায় সাত হাজার ফিলিস্তিনি বাসিন্দাকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করবে। এলাকার ২২টি বেদুইন সম্প্রদায় বসতি স্থাপন প্রকল্পে সরাসরি প্রভাবিত হবে।
প্রকল্পটিকে ইসরায়েলি ঔপনিবেশিক পরিকল্পনা হিসেবে অভিহিত করে অফিসটি আরও সতর্ক করে দেয়, এই পরিকল্পনা জাবাল আল-বাবা এবং ওয়াদি জামিলের সম্প্রদায়গুলোকে নিকটবর্তী আল-আইজারিয়া শহর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে।
১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে নিয়েছিল ইসরায়েল। ৩৮ বছর পর ২০০৫ সালে গাজা থেকে সেনা ও বসতি প্রত্যাহার করে দেশটি।
জর্ডান উপত্যকা অধিকৃত পশ্চিম তীরের পূর্ব অংশে অবস্থিত, যা জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে প্রসারিত উর্বর ও কৌশলগত অঞ্চল। এটি প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত এবং ফিলিস্তিনি কৃষি, জীবনযাপন ও ভূরাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। ইসরায়েল ১৯৬৭ সাল থেকে এই অঞ্চলটিও দখলে রেখেছে।
গত বছরের জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত পরামর্শমূলক মতামতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের সমস্ত বসতি খালি করারও আহ্বান জানান। ক্রমাগতভাবে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকে আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ এবং কার্যকর দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে গুরুতর বাধা বলে মনে করে আসছে জাতিসংঘও।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে