মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি
যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি, বরং দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রম সাময়িকভাবে কয়েক মাস পিছিয়ে পড়েছে—এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিআইএ)। বুধবার (২৫ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।
গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্র অত্যাধুনিক বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান ব্যবহার করে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্রে—নাতানজ, ফোরদো ও ইসফাহানে—বিমান হামলা চালায়। এ হামলায় ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর’ বোমা ব্যবহার করা হয়-যেটি ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট গভীর মাটি ছেদ করে বিস্ফোরিত হওয়ার সক্ষমতা রাখে।
হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একে ‘সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে সফল অভিযান’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং দাবি করেন, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ ও পরমাণু স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে।
তবে হামলার তিন দিনের মাথায় ডিআইএ-এর গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের ভূগর্ভস্থ মূল স্থাপনাগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে। সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ ধ্বংস হয়নি এবং সেন্ট্রিফিউজগুলোরও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মূলত স্থলভাগের অবকাঠামো ও কয়েকটি প্রবেশপথ।
সিবিএস নিউজকে গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানিয়েছে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সর্বোচ্চ কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে মাত্র।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইরান হামলার আগেই তাদের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের একটি অংশ স্থানান্তর করে ফেলেছিল, যার ফলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গেছে।
স্যাটেলাইট চিত্রে ফোর্দোর পারমাণবিক স্থাপনার আশপাশে ছয়টি বড় বিস্ফোরণস্থল দেখা গেছে, কিন্তু ভূগর্ভস্থ ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এসব চিত্র থেকে নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিকে হোয়াইট হাউস ডিআইএ-এর এই মূল্যায়নকে ‘পুরোপুরি ভুল’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বলেছে, এই প্রতিবেদন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে হেয় করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নিজেও ট্রুথ সোশ্যাল মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে প্রতিবেদন অস্বীকার করেছেন এবং এটিকে ‘সেনাবাহিনীর গৌরবকে ক্ষুন্ন করার অপপ্রয়াস’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের আঘাতে লক্ষ্যবস্তুতে চরম ধ্বংস এবং কার্যক্ষমতা অচল হয়েছে।’ তবে পেন্টাগনের অভ্যন্তরেই এ বিষয়ে ভিন্ন মূল্যায়ন যে রয়েছে, তা এবার স্পষ্ট হলো।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে