পঞ্চমদিনেও চলছে ইরান-ইসরায়েল পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত আরও তিনজন
সংঘাত শুরুর পঞ্চম দিনেও ইরানে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল থেকে এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানে তিনজন নিহত ও চারজন আহত হওয়ার দাবি জানিয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
অন্যদিকে ইসরায়েলের ওপর ইরানও ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে আইডিএফ। ওই হামলায় পাঁচজন ‘সামান্য আহত’ হয়েছেন বলেও জানিয়েছে দেশটি।
কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইরানে সর্বশেষ হতাহতের ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যাঞ্চলের ইস্পাহান শহরে। সকালে একটি তল্লাশিচৌকিতে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত তিনজন নিহত ও চারজন আহত হন।
ইরানের সংবাদ সংস্থা তাসনিম, আইএসএনএ ও মেহের নিহতদের খবর জানালেও বিস্তারিত তথ্য দেয়নি।
অন্যদিকে ইরানের অভিজাত ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) বলেছে, সকালে তারা ইসরায়েলের একটি সামরিক গোয়েন্দা কেন্দ্র ও মোসাদের একটি অপারেশন পরিকল্পনা কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে।
ইরানের আধা সরকারি তাসনিম নিউজ এজেন্সিতে প্রকাশিত বিবৃতিতে এই দাবি করেছে আইআরজিসি।
আল জাজিরা জানায়, এর আগে ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের শহর হার্জলিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে। উপকূলীয় শহরটির একটি ‘স্পর্শকাতর’ স্থান নিশানা করা এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। ‘স্পর্শকাতর’ স্থান বলতে সাধারণত কোনো সামরিক বা কৌশলগত স্থানের ইঙ্গিত দেয়।
আইডিএফ জানায়, মধ্য ইসরায়েলের একটি বাস পার্কিংলটে ইরানের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আহত হন পাঁচজন। তবে, দেশটির জরুরি সেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ) জানায়, সৌভাগ্যবশত, এটি ছাড়া অন্য কোথাও কোনো গুরুতর আহত বা অতিরিক্ত ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
আল জাজিরা জানায়, স্থানীয় সময় সকাল পৌনে নয়টার দিকে ‘উড়ে আসছে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র’- ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এমন সতর্কতা জারির পর রাজধানী তেল আবিব ও পশ্চিম জেরুজালেমেও বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সাইরেন বাজছে অন্য কয়েকটি অঞ্চলেও।
তেল আবিবে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা পড়ে ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে আইডিএফ। তবে প্রায় ২০ মিনিট পর আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষজনকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। নাগরিকদের তাদের নিরাপত্তায় হোমফ্রন্ট কমান্ডের নির্দেশাবলী অনুসরণেরও অনুরোধ জানিয়েছে প্রতিরক্ষা বাহিনীটি।
পুলিশ বাহিনী জানায়, যেসব এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র পড়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে, সেগুলোতে তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। তেল আবিবের কাছের গুশ দান জেলায় প্রাথমিকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা জানায় অগ্নিনির্বাপণ বাহিনীও।
এর আগে সোমবার (১৬ জুন) রাতে তেহরানে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান ব্রডকাস্টিং (আইআরআইবি)-এর প্রধান কার্যালয়ে ইসরায়েলি হামলায় তিনজন সম্প্রচারকর্মী নিহত হয়েছেন। আইআরজিসি ও সরকারি বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানায়, নিহতদের মধ্যে নিমা রেজাপুর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন সম্প্রচার সংস্থা আইআরআইবির নিউজ এডিটর এবং মাসুমে আজিমিসহ অন্য একজন সচিবালয়কর্মী। হামলার পর প্রায় এক ঘণ্টা টেলিভিশনটির সম্প্রচার বন্ধ ছিল।
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বরাতে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গতরাতে ইরান থেকে চারদিনের মধ্যে সর্বনিম্ন দশটিরও কম ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। লক্ষ্যবস্তু ছিল মধ্যাঞ্চল, কেন্দ্রীয় অঞ্চলের তেল আবিব এবং উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফা। এর মধ্যে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় হাইফার বেসামরিক তেল শোধনাগারে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তেল শোধনাগারটির পরিচালনাকারী হাইফাভিত্তিক বাজান গ্রুপ জানিয়েছে, ইরানের হামলায় এর আগে নিহত হয়েছিলেন তাদের তিনজন কর্মী সর্বশেষ হামলায় তেল শোধনে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ও বাষ্প উৎপাদনের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সমস্ত শোধনাগার কার্যক্রমই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত রাত থেকে ইরানের হামলায় গুরুতর আহত ১৫৪ জনকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ জুন) থেকে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের আঘাতে ইরানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন নারী-শিশুসহ মোট ২২৮ জন নিহত ও এক হাজার ২৮৬ জন আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ইরানের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন নারী-শিশুসহ ২৪ জন এবং আহত আরও প্রায় ৫০০ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে