সামাজিক ব্যবসা প্রসারে জাতীয় ফোরাম গঠনের উদ্যোগ

স্বাস্থ্যসহ দেশের বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা সমাধানে জাতীয় পর্যায়ে একটি সামাজিক ব্যবসা ফোরাম গঠনে সম্মত হয়েছে ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি ফোরাম’-এর অর্ধশতাধিক অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান। সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (আইডিএফ) সম্মেলনকক্ষে সামাজিক ব্যবসা দিবস ২০২৫-এর ‘বাংলাদেশ কান্ট্রি ফোরাম’ অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা প্রসারে গ্রামীণ গ্রুপের বিভিন্ন অংশ-প্রতিষ্ঠানও পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

জানা গেছে, ইউনূস সেন্টারের পক্ষ থেকে এ বছরের কান্ট্রি ফোরাম আয়োজনের দায়িত্ব পায় আইডিএফের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে এই ফোরামের আয়োজন করা হয়। এ বছরের প্রতিপদ্য ছিলো ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে কার্যকর পথ হলো সামাজিক ব্যবসা।’ স্বাস্থ্যসেবা খাতে নিজেদের চলমান সামাজিক ব্যবসার অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করা হয় ফোরামে। দেশে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে নিজেদের বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করে গ্রামীণ কল্যাণ, গ্রামীণ সুখী, সাজিদা ফাউন্ডেশন, আইডিএফ, সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট ইনোভেশন অ্যান্ড প্রেকটিসেস (সিদীপ), বাসা ফাউন্ডেশন এবং দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে)। এ সময় স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিদ্যমান নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয়েও আলোচনা করেন তারা। এ ছাড়াও থ্রি-জিরো ক্লাবের পরিচিতি, গঠন ও কর্মপরিধি নিয়ে আলোচনা করেন ‘থ্রি-জিরো’ ক্লাবের কর্মীরা।

এর আগে সামাজিক ব্যবসা প্রসারের প্রস্তাব ও প্রাথমিক রূপরেখা উপস্থাপন করেন আইডিএফের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম। এতে উপস্থিত প্রায় সব প্রতিষ্ঠান সম্মতি প্রদান করে। একই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ে একটি ফোরাম গঠনের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন উপস্থিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা। ফোরাম গঠন ছাড়াও সামাজিক ব্যবসা প্রসারের জন্য একটি তহবিল গঠন বিষয়ে আলোচনা হয়। জাতীয় ফোরাম গঠন ও কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্যে দ্রুত সময়ের মধ্যে রূপরেখাসহ আরেকটি সভা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আইডিএফের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল আলম বলেন, ‘অধ্যাপক ‍মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা মডেল নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজ হচ্ছে। এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপালেও টেকসই সামাজিক ব্যবসা ফোরাম রয়েছে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সামাজিক সমস্যা সমাধানের ব্যাপ্তি আরো প্রসারের জন্য একটি ফোরাম গঠন জরুরি। ফোরাম ও একটি তহবিল গঠন করা হলে এর আরো প্রসার ঘটবে। একই সঙ্গে তরুণ উদ্যোক্তারাও এই ফান্ডের সুবিধা নিতে পারবেন। সার্বিকভাবে দেশের সামাজিক সমস্যার সমাধান মিলবে এই ব্যবসার মাধ্যমে।’

এ বিষয়ে গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের এক্সিকিউটিভ ভাইস-চেয়ারম্যান নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘সামাজিক ব্যাবসা প্রসারের জন্য যেকোনো ধরনের সহযোগিতা করবে গ্রামীণ। আপনাদের যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।’

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল হান্নান চৌধুরী বলেন, ‘এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো সামাজিক ব্যবসা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। একই সঙ্গে সামাজিক ব্যবসাকে ডিজিটাইজড করে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া উচিত। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর সামাজিক ব্যবসা দিবসের ‘থ্রি-জিরো ক্লাব’ সেশন আয়োজন করবে।’

কান্ট্রি ফোরামের আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের সামাজিক ব্যবসার কাজ চলমান রাখতে আরো কিছু কাজ হাতে নেওয়া উচিত। আমি নিজেও সামাজিক ব্যবসা পরিচালনা করি। এই সামাজিক ব্যবসা আরো প্রসারে আমরা একটি ফোরাম গঠনের উদ্যোগ নেবো।’