উন্নত দেশের মত ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালুর উদ্যেগ নিন
বছর ২০ বছর আগেও ঢাকার রাস্তায় কিছু কিছু ট্রাফিক লাইট দেখা যেত। অনেক রাস্তাতেই ট্রাফিক পুলিশ থাকতে হতো না। লাল বাতি দেখলেই গাড়ি থেমে যেত। সবুজ বাতি দেখে চলতো। কিন্তু আজ সেইসব ট্রাফিক লাইটগুলো সব নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখন ট্রাফিক পুলিশের হাতের ইশারাই একমাত্র ভরসা। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে ট্রাফিক পুলিশকেই ট্রাফিক সিগন্যাল পালন করতে হয়। যা কোনো মেট্রোপলিটন সিটির বার্তা বহন করে না। ডিজিটাল দুনিয়ায় এখনো এ রকম ম্যানুয়াল ব্যবস্থা শুধু দুঃখজনক নয়, অমানবিকও বটে!
ট্রাফিক লাইট প্রথম চালু হয়েছিল লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ারে, ১৮৬৮ সালে। বাংলাদেশেও পাকিস্তান আমল থেকে ট্রাফিক লাইট চালু ছিল। রংপুরের মতো শহরেও ৪০ বছর আগে ট্রাফিক লাইট দেখে রাস্তা চলাচল করেছে মানুষ। দেশের সব জেলা শহরেই স্বাধীনতার পর ট্রাফিক লাইট চালু হয়। কিন্তু আজ কোথাও ট্রাফিক লাইট নেই বললেই চলে।
এর কারণ কী? দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে, নানারকম ডিজিটাল সেবা চালু হয়েছে, কিন্তু সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক লাইট কেন উধাও হয়ে গেল? এর কারণ অনেকগুলো। বর্তমান গণঅভ্যুত্থানের আগে রাস্তাসহ দেশের সর্বস্তরেই বিশৃঙ্খলার বেড়েছিল। রাস্তায় চলতো ফিটনেসবিহীন গাড়ি। ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে কেবল যে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা হতো তা-ই নয়, অনেক অনিয়ম-দুর্নীতিও নিয়ন্ত্রিত হতো। যানজট নিরসনে ট্রাফিক ব্যবস্থা বদলানোর দাবি বারবারই উঠেছে, কিন্তু কোনো সময়ই কেনো সরকার এটা আমলে নেয়নি। ২০১৮ সালেও ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ দাবিতে সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সড়ক ব্যবস্থাপনায় এতটুকু শিক্ষা নেয়নি টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার।
পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশেই ট্রাফিক পুলিশে এভাবে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করে না। উন্নত দেশের ব্যস্ততম সড়কেও ট্রাফিক লাইট দেখেই মানুষ চলাচল করে। রাত দুপুরে নির্জন রাস্তায় রেড লাইট দেখে গাড়ি থেমে যায়। এর কারণ ব্যবস্থার উন্নতি। যে-কোনো ব্যবস্থার একটা মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব আছে। হাতের ইশরায় চলাচলের অভ্যাস হয়ে গেলে মানুষ হাতের লোকটিকে যে-কোনোভাবে হোক ফাঁকি দিতে চেষ্টা করবে। ভাববে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তিই তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাদ্বারা অভ্যস্ত হয়ে গেলে মানুষ নিজেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখবে।
ট্রাফিক লাইট কেবল নির্দেশ নয়, এটা একটা সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার প্রতীক। লাল মানে থামা, সবুজ মানে চলা। এই প্রতীক মানুষকে স্ব-নিয়ন্ত্রতিত হতে শেখায়। ঢাকা শহরে যে তীব্র যানজট এটা কোনোভাবেই ট্র্রাফিক পুলিশের নিয়ন্ত্রণে দূর করা সম্ভব নয়। তার জন্য দরকার সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন। দেশে এক নবজাগরণের ডাক পড়েছে, শিক্ষার্থীরা সবকিছু বদলে দিতে চাচ্ছেন, আমরা আশা করব সড়কেও দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন আসবে। ফিটনেসবিহনী গাড়িগুলো দূর হবে। শব্দদূষণ কমবে। যানজট কমবে। ট্রাফিক পুলিশের জায়গায় জ্বলে উঠবে ট্রাফিক লাইট। যাত্রী ও চালকরাও চলাচলে সচেতন হবেন। অন্তবর্তী সরকারকেও আমরা বলতে চাই, দ্রুত এসব ব্যবস্থার পরিবর্তন করুন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে