যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি চুক্তি করল ভারত
রাশিয়া থেকে তেল না কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ চলতে থাকলেও এরই মধ্যে ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি চুক্তি করেছে ভারত। এই চুক্তির আওতায় দেশে ব্যবহৃত মোট তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) প্রায় ১০ শতাংশই সরবরাহ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চুক্তিটি কবে স্বাক্ষর হয়েছে, তা ভারত স্পষ্ট করে জানায়নি।
সোমবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসমন্ত্রী হারদ্বীপ সিং পুরি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে বছরে ২২ লাখ টন এলপিজি আমদানির জন্য এক বছর মেয়াদি চুক্তি করা হয়েছে। এটি মূলত ভারতীয় বাজারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রথম এলপিজি সরবরাহ চুক্তি।
মন্ত্রী বলেন, ভারতের জনগণ যাতে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী মূল্যে এলপিজি পায়, সে জন্য বিভিন্ন উৎস থেকে জ্বালানি সংগ্রহের পথ খোলা হচ্ছে। এই চুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের দ্রুত বাড়তে থাকা অন্যতম বড় এলপিজি বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও উন্মুক্ত হলো।
এর আগে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল কেনা নিয়ে গত আগস্টে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক তলানিতে নেমে যায়। এ ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। পরে ট্রাম্প দাবি করেন, সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির অংশ হিসেবে রাশিয়ার তেল আমদানি কমাতে সম্মত হয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে নয়াদিল্লি এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনও নিশ্চয়তা দেয়নি। বরং কৃষিপণ্য, তেল কেনাসহ নানা বিষয়ে মতপার্থক্য থাকা সত্ত্বেও দুই দেশ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত অক্টোবরে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা রুশ তেল কেনা বন্ধ করেছে। রাশিয়ার দুটি বড় তেল কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ব্যক্তি খাতের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজও জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার প্রভাব তারা পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত চলতি বছরের জুন প্রান্তিকে পাঁচ ত্রৈমাসিকের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক এখনো ভারতের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত শুল্ক কমানো না হলে এ অর্থবছরে দেশটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬০ থেকে ৮০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
মসলা, চা, আমসহ কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার
ভারতের গোলমরিচ, লবঙ্গ, জিরা, এলাচ, হলুদ, আদাসহ বেশ কিছু মসলা, চা, আম এবং কাজু–বাদাম থেকে ট্রাম্প সরকার শুল্ক প্রত্যাহার করেছে। সোমবার তিনি এই সংক্রান্ত আদেশে স্বাক্ষর করেন।
হোয়াইট হাউস–সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসাম চা ও দার্জিলিং চাসহ ভারতের সব ধরনের চা শুল্কমুক্ত করা হয়েছে। তবে বাসমতি চাল, চিংড়ি ও সামুদ্রিক মাছের ওপর শুল্ক বহাল আছে। রত্ন, অলংকার, তৈরি পোশাকসহ আরও অনেক পণ্যের ওপরও শুল্ক বলবৎ রয়েছে।
ট্রাম্প সরকারের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্কে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মার্কিন বাজারে এসব দেশের পণ্যের সরবরাহ কমে যায়, ফলে খাদ্য ও কৃষিজসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। খবর এএফপির।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে