Views Bangladesh Logo

ঐতিহ্যবাহী ঈদকার্ডের সন্ধানে

প্রিয় মানুষকে শুভেচ্ছা কার্ড দেয়ার রীতি প্রায় ১৮০ বছরের পুরোনো। সেই রানি ভিক্টোরিয়ার সময় থেকে বাড়তে থাকে এর জনপ্রিয়তা। প্রথমদিকে নতুন বছর, বড়দিন কিংবা জন্মদিনে এর ব্যবহার হলেও কালক্রমে শুভেচ্ছা হিসেবে ঈদকার্ড দেয়ার রীতিও ছড়িয়ে পড়ে পুরো বিশ্বে। পশ্চিমের এই রীতি এখনো বহাল থাকলেও বাংলাদেশসহ এশিয়ার নানান অঞ্চলে ঈদকার্ড দেয়ার রীতিতে পড়েছে ভাটা।

খুব বেশি দিন আগেও না, এই তো বছর দশেক আগেও ঈদ উপলক্ষে লোকজন তার প্রিয় মানুষকে ঈদকার্ড দিত। ভেতরে লেখা থাকত দুই লাইনের শুভেচ্ছা বার্তা। লোকজন মহাসমারোহে ঈদকার্ড বিলি করত। কেউবা হাতে হাতে দিত, কেউ আবার পোস্ট অফিসের সাহায্যে পাঠাত। বর্তমানে প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সাফল্যে লোকজনের হাতে হাতে স্মার্টফোন, কম্পিউটার। স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে থেকে শুরু করে আবালবৃদ্ধবনিতার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ট্রেন্ড লক্ষণীয়। এখন কাউকে একটা বার্তা পাঠাতে চিঠির ওপর নির্ভর করতে হয় না। ফোনটি হাতে নিয়ে টুক করে দুই লাইনের একটা শুভেচ্ছা মুহূর্তেই পৃথিবীর অপর প্রান্তে থাকা মানুষের কাছে পাঠানো যায়। এই আধুনিক যুগে যেখানে মুহূর্তেই লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় সেখানে চিঠির ব্যবহার কমে আসাটাই স্বাভাবিক। তবে কোনো কোনো আচার-অনুষ্ঠান আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যায়। এসব আচার-অনুষ্ঠানে ভাটা পড়লে অনেকেরই মন খারাপ হয়। ঈদকার্ডের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনই।

ঈদকার্ড বিক্রি হতো বইপত্রের বিভিন্ন দোকানে। আবার কসমেটিকসের দোকানেও মাঝেমধ্যে পাওয়া যেত। বলা যায় একদম হাতের কাছেই ছিল ঈদকার্ড। কালেভদ্রে দুই-একটা দোকানে এখনো দেখা যায়, তবে বিক্রিবাট্টা নেই তেমন। এক দোকানদার জানাল, আট-দশ বছর আগেও ঈদকার্ড বিক্রি হতো। এখন আর কেউ কেনে না। সবার হাতে মোবাইল ফোন। এ সময় কে কিনবে ঈদকার্ড? ঈদকার্ড দেয়ার রীতি নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন অ্যাক্টিভিস্ট আয়শা মুক্তি। তিনি জানান, ‘আমরা যখন স্কুল-কলেজে পড়তাম, তখন ঈদকার্ড দেয়ার রীতি ছিল। সব সময়ই যে দোকান থেকে কিনতাম, এমনও না। দেখা যেত রঙিন কাগজ নিয়ে নিজেরাই বানিয়ে ফেলতাম। আবার সাদা কাগজে রং মেখে ভেতরে এক-দুই লাইনের শুভেচ্ছা লিখে ফেলতাম। পরিবারের লোকজন ছাড়াও কাছের বান্ধবী, স্কুলের টিচারদের দিতাম। মাঝেমধ্যে ঈদকার্ডের সঙ্গে কলম কিংবা ক্যান্ডিও উপহার দিতাম। এখন নতুনদের মধ্যে এই ট্রেন্ড আর নেই। সবাই মোবাইল হাতে ব্যস্ত।’

যে কোনো শুভেচ্ছা কার্ডের ডিজাইন হয় নজরকাড়া। ঈদকার্ডের ক্ষেত্রেও একই কথা। পার্থক্যটা হচ্ছে ঈদকার্ডের ডিজাইনে ইসলামিক সংস্কৃতির ছোঁয়া রয়েছে। মসজিদের মিম্বরের ওপর চিকন এক ফালি চাঁদের ছবি। পাশে দুই-একটা তারা। আবার ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি করছেন লোকজন কিংবা জায়নামাজে বসে কেউবা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করছেন। বেশিরভাগ ঈদকার্ডের ডিজাইন এ রকমই হয়। তবে ভিন্নতাও রয়েছে। ফুল বা লতাপাতায় মোড়ানো ঈদকার্ডেরও প্রচলন ছিল। ভেতরে লেখা থাকত ঈদ মোবারক। কখনোবা আরও দু-চার লাইনও থাকত। বেশিরভাগ লেখাই ইংরেজিতে হলেও বাংলা ঈদকার্ডের প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। উপরে প্রিয় মানুষের নাম। নিচে লিখতে হতো নিজের নাম। বাসাবাড়ির অনেক মুরব্বি আবার ঈদকার্ডের ভেতরে ঈদ সালামি বা ঈদি পুরে দিতেন। বাড়ির ছোটরা ঈদের নামাজ শেষে বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করত। তার পরই সেই কাক্সিক্ষত সালামি এবং ঈদকার্ড। তবে সেসব এখন অদূর অতীতে ফেলে আসা স্মৃতি। এখনো অনেক একান্নবর্তী পরিবারে এই ঈদকার্ড বিলির রীতি রয়েছে। হারিয়ে গিয়েও আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এমন অনেক উদাহরণ।

মাহমুদুল হাসান উৎস: বিজ্ঞান লেখক

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ