Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশের নার্সিং পেশা উন্নত করা জরুরি

৮২০ সালের ১২ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আধুনিক নার্সিং পেশার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল। তার জন্মদিন উপলক্ষে ১৯৬৫ সাল থেকে পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক নার্সিং দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল- ‘আমাদের নার্স আমাদের ভবিষ্যৎ, অর্থনৈতিক শক্তি নার্সিং সেবার ভিত্তি’। দিবসটিতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সদের সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করেছে; কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, দিবসটি উপলক্ষে আমরা জানতে পারলাম বাংলাদেশে ৯৬ শতাংশ নার্স কাজ করছেন কম বেতনে।

সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে সরাসরি রোগীর সেবাদানকারী ৯২ শতাংশ নার্স কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। আবার বেশি কাজ করেও পেশাটির ৯৬ শতাংশ কর্মী কম বেতন পাচ্ছেন। নার্সদের সুরক্ষা ও অধিকার নিয়ে কাজ করা সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটসের (এসএনএসআর) জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। সামগ্রিক চিত্রটি খুবই করুণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক বৈরিতা, উপযুক্ত পরিবেশের অভাব, রোগীর স্বজনের দুর্ব্যবহারসহ পেশাগত জীবনের নানা চাপের প্রভাব নার্সদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়ছে।

কথায় কথায় আমরা নার্সিং পেশাকে মহান পেশা হিসেবে উল্লেখ করি। নার্সিং পেশার কথা আসলে আমরা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল, মাদার তেরেসা, নার্স এডিথ ক্যাভেলের নাম বলি। স্কুলে শিক্ষার্থীদের তাদের মহান কীর্তির কথা পড়ানো হয়, তাদের শেখানো হয় ‘সেবাই পরম ধর্ম’। কিন্তু আমাদের দেশের সেবিকাদের এমন করুণ অবস্থা কেন? এখনো নার্সিং পেশায় সামাজিক সম্মান নেই। সম্মান নেই কারণ তাদের পেশাগত মর্যাদাও নেই। অথচ আমরা সবাই জানি স্বাস্থ্যসেবায় তাদের গুরুত্ব কতখানি। তাহলে তাদের প্রতি কেন এতটা বৈষম্য?

একজন নার্স তার প্রতিদিনের প্রতিটি কর্মঘণ্টার প্রতিটি মিনিট ব্যয় করেন একজনের পর একজন রোগীর সেবায়। অনেক হাসপাতালে একটু বিশ্রামেরও সুযোগ পান না তারা। তার ওপর বাড়তি আয়ের জন্য বাড়তি সময়ও কাজ করতে হয়। তাও যৎসামান্য। রাত-দিন অমানবিক পরিশ্রম করে যারা মানুষের সেবায় নিজের জীবন নিয়োজিত করেছেন অনেক সময় তাদের পরিবারও ঠিক মতো চলে না। বলতে খারাপ শোনায়, তাও বলে রাখা প্রয়োজন একজন নার্সের চেয়ে বাংলাদেশের অনেক শহরে অনেক বেশি আয় করেন একজন গৃহ-পরিচারিকা। কোনো পেশাই অসম্মানজনক নয়; কিন্তু নার্সিং পেশার মতো এমন পরিশ্রমের এবং যেখানে জীবন-মরণের সমস্যা জড়িত, অন্যান্য পেশার চেয়ে বেশি সাবধানতা ও দক্ষতা প্রয়োজন সেখানে কেন বেতন এত কম? তা ছাড়া বাংলাদেশে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যাও খুব কম। ফলে একজন নার্সদের তার সাধ্যের অতীত দায়িত্ব পালন করতে হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, বাংলাদেশে চিকিৎসাসেবায় ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ নার্স ও মিডওয়াইফারি প্রয়োজন। বর্তমানে ১ লাখ ৩ হাজার ১৫১ জন নার্স রয়েছে যা চাহিদার তুলনায় ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার সামগ্রিক রূপান্তর প্রয়োজন। স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, সুপারিশগুলোর মধ্যে যেগুলো এখনই বাস্তবায়নযোগ্য, তা দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আমরা চাই এর মধ্যে নার্সদের জীবনমান উন্নতির বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকুক এবং তা দ্রুত কার্যকর হোক। নার্সিং পেশার উন্নতি না হলে সামগ্রিক চিকিৎসাসেবার মান বাড়বে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ