Views Bangladesh Logo

যানজট নিরসনে সিগন্যাল বাতির কার্যকারিতা বাস্তবায়ন করুন

বাংলাদেশের ট্রাফিক ব্যবস্থার বিশৃঙ্খলা নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই। যতবার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করে ততবারই তা ব্যর্থ হয়। এ যেন ফুটো পাত্রে পানি রাখার মতোই ব্যাপার। একদিকে পানি ঢালা হচ্ছে আরেকদিক দিয়ে পানি বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলাফল সেই শূন্য। এর মধ্যে ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার শৃঙ্খলা আনতে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। উচ্চ আদালত মোড় থেকে শাহবাগ-বিজয় সরণি হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত বুয়েটের কারিগরি সহায়তায় ২২টি নতুন মোড়ে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হচ্ছে। সাতটি মোড়ে সিগন্যাল স্থাপন শেষে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও দেখা দিয়েছে ত্রুটি। ভরসা সেই সনাতনী হাতের ইশারা।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ৩১ আগস্ট আবদুল্লাহপুর থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত সাতটি ইন্টারসেকশনে পরীক্ষামূলক স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সংকেত পদ্ধতি চালু করা হয়। দেশীয় প্রযুক্তিতে লাল-সবুজ-হলুদ বাতির খুঁটি বসানো হয় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ) ও রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন যৌথভাবে এই কাজ করে। পরীক্ষামূলক পদ্ধতিতে সফলতা পেলে আরও ১৫টি মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।

কিন্তু সরেজমিন তদন্তে দেখা গেল সব মোড়েই এখনো ট্রাফিক সিগন্যাল চলছে সেই সনাতন পদ্ধতিতেই। অর্থাৎ হাতের ইশারায়। গাড়ি থামানোর জন্য ট্রাফিক পুলিশকে এখনো দুহাত ছড়িয়ে রাস্তায় দাঁড়াতে হয়। চালকরা লাল বাতি থোরাই কেয়ার করে। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এরকম অরাজক, অমানবিক ট্রাফিক ব্যবস্থা আর নেই। এসব প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগেও বিভিন্ন সময় ঢাকায় সিগন্যাল ব্যবস্থা কার্যকরের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার; কিন্তু তার কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি। তাই আগের একাধিক উদাহরণ সামনে রেখে ঢাকায় নতুন করে দেশীয় প্রযুক্তিতে সিগন্যাল বাতি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

একটি সুষ্ঠু-সুন্দর নগর ব্যবস্থাপনার স্পষ্ট দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে এখনো শৃঙ্খলাবোধ গড়ে উঠেনি তা বোঝা যায় এই ট্রাফিক ব্যবস্থা দেখেই। এর জন্য কেবল লাল বাতি-সবুজ বাতির সাংকেতিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তুললে হবে না, চালকদেরও ভালোভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে। আইন জোরালো না হলে এই অব্যবস্থাপনা চলতেই থাকবে। কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে; কিন্তু তাতে কোনো ফল হবে না।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কোথাও কোথাও খুঁটি স্থাপিত হলেও বাতি জ্বলছে না, আবার বাতি জ্বললেও তা জানেন না চালকরা। তাহলে কেন এই উদ্যোগ নেয়া হলো তাও খতিয়ে দেখা দরকার। ব্যবস্থা কার্যকর না হলে কোটি কোটি টাকা খরচের অর্থ কী? তা নিতান্তই অপচয়। এ ব্যাপারে কঠোর আইন প্রয়োগ, চালকদের প্রশিক্ষিত করা অতি জরুরি। এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারেরই। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা না মানলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে না।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ