শেখ হাসিনার আইনজীবী হতে জেড আই খান পান্নার আবেদন নামঞ্জুর
জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে আইনজীবী হতে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তবে আমলে না নিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে এসে তার এমন আবেদনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) পান্নার পক্ষে আইনজীবী নাজনীন নাহার ট্রাইব্যুনালে আবেদনটি দাখিল করেছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনো আবেদন গ্রহণ করা সম্ভব নয়। ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার পর স্টেশনমাস্টারকে বলে ট্রেনে ওঠার সুযোগ নেই। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পরও শেখ হাসিনা হাজির হননি, অনেক খুঁজে তার পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন করে আইনজীবী দেয়ার আইনি সুযোগও নেই’।
চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলাটির বিচার চলছে। তিনজন আসামির অন্যজন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হিসেবে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
১ জুন তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। ১৭ জুন ট্রাইব্যুনালের দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে নির্দেশে পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে সাতদিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়া হয়। তারা হাজির না হওয়ায় ২৫ জুন ঢাকার ৮ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের সাবেক বিশেষ পিপি আইনজীবী আমির হোসেনকে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) হিসেবে নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। তিনি এরই মধ্যে কয়েকদিন শেখ হাসিনার পক্ষে শুনানি করেছেন। এ কারণে জেড আই পান্নার আবেদন আমলে নেননি বলেও জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। ৩ আগস্ট সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেমেন্ট) উপস্থাপন করেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন পাঁচজন সাক্ষী আন্দোলনে আহত গাড়িচালক খোকন চন্দ্র বর্মন, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান, গৃহবধূ পারভীন, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী রিনা মুরমু এবং এনটিভির রংপুরের সাংবাদিক এ কে এম মঈনুল হক। তাদেরকে জেরাও শেষ করেছেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। ১৭ আগস্ট পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে প্রথম এই মামলাটি (মিস কেস বা বিবিধ মামলা) হয় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে