Views Bangladesh Logo

নগর ভবন বন্ধ থাকার পরও কোটি টাকার তেল কীভাবে খরচ হলো

গাড়ি চলে না; কিন্তু তেল খচর হয়- তাও কোটি কোটি টাকার তেল- এমন কাণ্ডকে ভৌতিক কাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে; কিন্তু রাজধানীর নগর ভবনের গাড়ি নিশ্চয়ই অদৃশ্য কেউ চালাননি। চালিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারাই; কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ৪০ দিন বন্ধ থাকার সময় তারা গাড়ি চালিয়েছেন কেন?

গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার দাবিতে আন্দোলনের কারণে ৪০ দিন নগর ভবনের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তাদের অনেকে তখন এক দিনও অফিসে আসেননি। অথচ তাদের জন্য বরাদ্দ করা গাড়ির বিপরীতে প্রতিদিন ১৪-১৫ লিটার তেল খরচ দেখিয়েছেন।

দক্ষিণ সিটিরই অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, অফিস বন্ধ থাকার পরও এই তেল গেল কোথায়? ঢাকা দক্ষিণ সিটির হিসাব অনুযায়ী, সংস্থাটিতে প্রতি মাসে জ্বালানি খাতে খরচ হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা। এপ্রিল, মে ও জুন মাসের খরচ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মে ও জুন মাসে নগর ভবন ৪০ দিন বন্ধ থাকলেও খরচ হয়েছে স্বাভাবিক সময়ের সমান তেল। অথচ এই সময়ে কার্যত কোনো অফিস কার্যক্রম ছিল না।

গাড়ির চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অফিস বন্ধ থাকার সময় কর্মকর্তাদের নিয়ে তারা অফিসে আসেনি। হয়তো প্রয়োজনে এদিক-ওদিক গিয়েছেন। অথচ করপোরেশনের পরিবহন বিভাগ জানিয়েছে, গাড়িটি প্রতি লিটার জ্বালানিতে গড়ে ৮ কিলোমিটার চলে। সে হিসাবে ১৫ লিটার তেল দিয়ে ১২০ কিলোমিটার প্রতিদিন চলেছে বলেই হিসাব দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন হলো নগর ভবন বন্ধ থাকলে এই দৈনিক ১২০ কিলোমিটার যাত্রা কোথায় হয়েছে?

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের তিনজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তারা পুরো সময় নগর ভবনে আসেননি। এমনকি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে নগর ভবনে আসছেন অনিয়মিত। প্রশ্ন আরও জোরালো হয় যখন দেখা যায়, প্রধান সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান একই সময় প্রতিদিন ১৪ লিটার করে মোট ৫৬০ লিটার তেল নিয়েছেন। এতে করপোরেশনের খরচ হয়েছে ৫৭ হাজার ১২০ টাকা। তিনি দাবি করেন, নগর ভবন বন্ধ থাকলেও তিনি ঢাকা ওয়াসা ভবন, সচিবালয় ও কর্মচারী হাসপাতালে অফিস করেছেন। তাই তেল নিয়েছেন; কিন্তু করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, আন্দোলনের সময় করপোরেশনের বাইরে নিয়মিত অফিস চালানোর মতো কোনো অবকাঠামোই ছিল না। কিছু জরুরি সভা সচিবালয় ও ওয়াসা ভবনে হয়েছে মাত্র।

সমস্ত বিশ্লেষণে বোঝা যায় শর্ষের ভেতর ভূত রয়েছে। কোথায় এ তেল খচর হলো তার সুষ্ঠু তদন্ত অবশ্যই হওয়া দরকার। কারা এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এবং বিচারের আওতায় আনতে হবে। সরকারি অর্থের এরকম নয়-ছয় করা কোনোভাবেই ক্ষমাযোগ্য নয়। তাই জনগণের অর্থের যোগসাজশমূলক, অবৈধ, অনৈতিক ও প্রতারণামূলক আত্মসাতের এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ