Views Bangladesh Logo

ঋণের নামে আর কত জুলুম চলবে অসহায় মানুষের ওপর!

সুদ ও ঋণ যদিও অর্থনীতির একটা অন্যতম চালিকাশক্তি, তবুও প্রাচীনকাল থেকেই অনেক ধর্ম ও আইনে সুদ-ঋণকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ ঋণ ও সুদ সমাজে বৈষম্য বাড়ায়। সুদখোর কখনো ক্ষতির ঝুঁকি নেয় না বরং অসহায় মানুষের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সে সবসময় মুনাফা নিশ্চিত করে। ফলে গরিব আরও গরিব হয়, ধনী আরও ধনী হয় এবং তার জন্য প্রায় সময়ই অসহায় মানুষকে করুণ অমানবিকতার শিকার হতে হয়।

তেমনি এক খবর জানা গেল গতকাল (৭ অক্টোবর) ঋণের টাকা দিতে পারেননি বলে কুমিল্লায় এক বৃদ্ধকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। ভুক্তভোগীর নাম আলী আকবর (৭০)। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বোরহান উদ্দিন নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত সোমবার সকালে চান্দিনা উপজেলার রসুলপুর গ্রামে এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এদিন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৃদ্ধকে একটি বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য। পরে গতকাল বিকেলে ওই বৃদ্ধকে নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রসুলপুর গ্রামের আবুল কালাম ও তার ছেলে বোরহান উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে সুদের ব্যবসা করে আসছেন। আকবর তার ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে বোরহানের কাছ থেকে দুই বছর আগে ৭০ হাজার টাকা ঋণ নেন। বোরহান সুদসহ ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা পরিশোধ করতে না পারায় গতকাল সকালে আকবরকে ধরে নিয়ে বিদ্যুতের খুঁটিতে বেঁধে রেখে নির্যাতন করা হয়। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন।

আলী আকবরের ছেলে ইব্রাহীম খলিলের ভাষ্য, তার বাবা টাকা ফেরত দেয়ার জন্য কিছুদিন সময় চেয়েছিলেন; কিন্তু বোরহান সেই সময় না দিয়ে তার বাবার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছেন। কার কাছে এই ঘটনার বিচার চাইব- সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি। নির্যাতনের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বোরহানকে আটক করে চান্দিনা থানার পুলিশ।

প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে, সুদের হার কীভাবে দ্বিগুণের বেশি হয়? ৭০ হাজার টাকার ঋণ ১ লাখ ৫০ হাজার- এটাই তো এক অমানবিক দাবি। বিপদে পড়ে না বুঝে যদি কেউ এরকম দ্বিগুণ হারে সুদ নেয়ও তা ঋণ-প্রদানকারীকেই প্রথমে অভিযুক্ত করা উচিত।

দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধকে জনসম্মুখে আড়াই ঘণ্টা খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হলো, এ কেমন অমানবিকতা? এটা তো মধ্যযুগীয় বর্বরতা। আশপাশে কি এমন কোনো মানুষ ছিল না যারা বৃদ্ধকে ছাড়িয়ে আনতে পারতেন? এটা তো একটা অধঃপতিত সমাজের নজির।

ঋণ ও সুদের কারণে আমাদের সমাজে যদি আজও এরকম অমানবিক কার্যক্রম চলে তাহলে ধরে নিতে হবে আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র আজও অনেক পশ্চাৎপদে রয়ে গেছে। আমরা সরকারকে বলতে চাই, প্রকৃত শিক্ষা ও আইনের প্রয়োগ ছাড়া এ সমাজ-রাষ্ট্র কখনো সভ্য হবে না। ব্যক্তির এই মর্যাদাহানীর মূল্য রাষ্ট্রকে অবশ্যই দিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ