Views Bangladesh Logo

কারাগারে কীভাবে সময় কাটাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

ক্ষমতার আসন থেকে কারাগারের নিঃসঙ্গ কক্ষে- এ যেন এক নাটকীয় পরিবর্তনের গল্প। এক সময় যারা দেশের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রেখেছেন, আজ আটকে আছেন জেলখানার চার দেয়ালের মাঝখানে। কাশিমপুর কারাগারে আটক থাকা ২৬ জন ভিআইপি বন্দির মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা রয়েছেন, যাদের অতীত জীবনের চাকচিক্য ও বর্তমান জীবনের নিঃসঙ্গতা এক করুণ বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছে।

জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারে এসব ভিআইপি বন্দিদের জন্য রয়েছে বিশেষ ডিভিশন সুবিধা। প্রতিটি কক্ষে একটি খাট, একটি টেবিল ও একটি চেয়ার রাখা হয়েছে। দৈনিক একটি জাতীয় পত্রিকা পড়ার সুযোগ এবং বিটিভি দেখার ব্যবস্থাও আছে। খাবারের তালিকায় নিয়মিত মাছ বা মাংস থাকে। চাইলে কারাগারের ক্যান্টিন থেকেও কেনাকাটা করে খাওয়া যায়। আরও আছে একটি লাইব্রেরি, যেখানে প্রায় ২ হাজার বই রয়েছে।

বন্দিরা বাইরে থেকেও বই আনাতে পারেন, তবে তা কারা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের পরই হাতে পান। এই বন্দিদের মধ্যে রয়েছে সালমান এফ রহমান, শাহজাহান খান এবং জুনায়েদ আহমেদ পলক। একসময় ক্ষমতার শীর্ষে থাকা এই তিন নেতা আজ কাটাচ্ছেন ভিন্ন এক বাস্তবতায় দিন।

সালমান এফ রহমান: ইবাদত-তসবিহতেই সময় কাটে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এবং শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান আজ একেবারে ভিন্ন এক জীবনযাপন করছেন। ২০১৭ সালে চীনা সংস্থা হুরুন গ্লোবাল প্রকাশিত বিশ্বের ধনীদের তালিকায় তার অবস্থান ছিল ১৬৮৫তম। অথচ এখন তার পরিচয়- একজন ভিআইপি বন্দি।

কারাগারের সূত্র জানায়, সালমান এফ রহমান দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত এবং তসবিহ পাঠে। ফজরের নামাজের পর কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ান, তারপর কোরআন পড়েন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন এবং হাদিসের বই পড়ে সময় কাটান। তার জীবনে এখন কোনো মোবাইল ফোন নেই, নেই ব্যবসায়ী সভা-সমাবেশ বা দাপ্তরিক ব্যস্ততা।

একান্তে থাকা, নিজের ভেতরে ডুবে থাকা এবং আধ্যাত্মিক চর্চার মাধ্যমেই তিনি তার নতুন জীবনকে মানিয়ে নিচ্ছেন। কারাগারের অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গেও তিনি কিছুটা সময় কাটান, তবে সন্ধ্যা নামতেই নিজ কক্ষে ফিরে যান। তার খাবার ক্যান্টিন থেকেই আসে, তবে রুচিশীল খাবারের চেয়ে এখন ইবাদতই তার মানসিক শান্তির উৎস।

শাহজাহান খান: পত্রিকা, বই আর পায়চারি মাদারীপুর-২ আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং সাবেক মুক্তিযোদ্ধা নেতা শাহজাহান খান কারাগারে জীবন কাটাচ্ছেন অপেক্ষাকৃত শান্ত ও গুছানোভাবে। কারাগারে বন্দি হলেও তার মানসিক দৃঢ়তা বেশ লক্ষণীয়। প্রতিদিন সকালে উঠে পায়চারি করেন, দুপুরে বই পড়েন, আর বিকেলে আবার হাঁটাহাটিও করেন।

তার সময় কাটে পত্রিকা ও রাজনৈতিক বইপত্র পড়ে। তিনি অনেক সময় পুরোনো রাজনৈতিক ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ের রাজনীতির নানা অধ্যায় নিয়ে সহবন্দিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।

একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ হিসেবে কারাগারের পরিবেশে মানিয়ে নিতে তার খুব বেশি সময় লাগেনি। বই পড়ার পাশাপাশি মাঝে মাঝে লিখতেও দেখা যায় তাকে। জানা গেছে, তিনি একটি আত্মজীবনীমূলক বই লেখার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

তিনবেলা খাবারও ক্যান্টিন থেকে কিনেই খান। বই আনার জন্য নিয়মিত আবেদন করেন এবং প্রায়ই লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহ করেন। কারা কর্মকর্তা ও অন্যান্য বন্দিদের কাছেও তিনি একজন শান্ত ও ভদ্রলোক হিসেবেই পরিচিত।

জুনায়েদ আহমেদ পলক: নিঃসঙ্গতা ও মানসিক চাপের মাঝে দিনযাপন আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের একজন পরিচিত মুখ জুনায়েদ আহমেদ পলক। এক সময় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা এই নেতা এখন রয়েছেন নানা মামলার মুখে এবং কারাবন্দি অবস্থায় অতিবাহিত করছেন সময়।

তবে তার সময় কাটছে অন্য দুই নেতার চেয়ে একেবারে ভিন্নভাবে। কারা সূত্রে জানা যায়, পলক বেশিরভাগ সময় থাকেন নিঃসঙ্গ ও একাকী। অন্য বন্দিদের সঙ্গে খুব কমই কথা বলেন। প্রায়ই তাকে চুপচাপ বসে থাকতে বা চোখে অশ্রু নিয়ে সময় কাটাতে দেখা যায়। মাঝে মাঝে কান্না করতে দেখা যায় তাকে।

নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি কারাগারে এনেছেন পাঁচটি বই—ফৌজদারি কার্যবিধি, দেওয়ানি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং জাতীয় সংসদে তার নিজস্ব বক্তৃতা সংকলন। এই বইগুলো পড়ে তিনি নিজের মামলা সংক্রান্ত বিষয়গুলো বুঝে নেয়ার চেষ্টা করছেন। একজন তরুণ নেতা হিসেবে এই হঠাৎ পতন তার মানসিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। আদালতে গিয়ে তিনি নিজেকে কখনও নির্দোষ দাবি করেন, আবার কখনও দোয়ার আবেদন জানান।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ