Views Bangladesh Logo

ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচন

সব বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে নির্বাচন দিন

দীর্ঘ ৬ বছর পর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৯ সেপ্টেম্বর। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। শুধু ডাকসু নির্বাচন নয়, ঘোষণা করা হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিলও। এ নির্বাচনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে ১৫ সেপ্টেম্বর। এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনের তফসিল আজ ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান। জাকসু নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর। গণ-অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ডাকসু, রাকসু ও জাকসু ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা ভিউজ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সেই সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিলও শিগগিরই ঘোষণার আহ্বান জানাই।

১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদকে (ডাকসু) তার ঐতিহাসিক ভূমিকার কারণে বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় সংসদ’ হিসেবে অভিহিত করা হয়। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা দাবি, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান কিংবা নব্বইয়ের এরশাদবিরোধী আন্দোলন- প্রতিটি ঐতিহাসিক সংগ্রামে ডাকসু গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছে। পাশাপাশি রাকসু ও জাকসুসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি অনেক পুরোনো। কারণ দেশে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রে এসব নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। বলা হয়ে থাকে, ডাকসু রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্রিডিং গ্রাউন্ড। এ দেশের অনেক রাজনৈতিক নেতারই রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এসব নেতা প্রতিনিধিত্বশীল রাজনীতির সূচনা করেছিলেন। এ কারণে একসময় ডাকসুকে বলা হতো দেশের সেকেন্ড পার্লামেন্ট।

ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের ঘোষিত সময়সীমা আগামী সেপ্টেম্বর, নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে এই ঘোষণার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভবিষ্যৎ রাজনীতির সম্ভাব্য চিত্র।

কারণ ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মধ্যে টানাপোড়েন ও সহিংসতা তৈরি হতে পারে যা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেই অনিশ্চিত করে তুলতে পারে। নির্বাচনটি যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়, যেখানে সব পক্ষ ফলাফল মেনে নেবে এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকবে। এমনটা হলে এটি শুধু ডাকসু, রাকসু ও জাকসু পুনর্জাগরণ নয়; বরং দেশের গণতন্ত্রের জন্য এক নতুন অধ্যায় সূচনার মাইলফলক হতে পারে।

কিন্তু যদি এই নির্বাচনে অস্থিরতা বা প্রহসনের জন্ম হয় তাহলে প্রশ্ন উঠবেই- একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন যেখানে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হয় না, সেখানে জাতীয় পর্যায়ে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সরকার কতটা প্রস্তুত? সে ক্ষেত্রে ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচন তাই শুধু ছাত্র রাজনীতির নয়, হয়ে উঠতে পারে জাতীয় রাজনীতির একটি বড় ‘রেফারেন্ডাম’ বা নির্ধারক ঘটনা।

কাজেই আমরা আশা করব, নির্ধারিত তারিখেই অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু, রাকসু ও জাকসু নির্বাচন। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। এসব নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশে সুস্থ ধারার ছাত্র রাজনীতি গড়ে উঠবে- এটাই প্রত্যাশা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ