Views Bangladesh Logo

ঐতিহাসিক পলাশী দিবস আজ

পলাশী যুদ্ধের ইতিহাস বিশ্বাস ঘাতকতার

জ ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশী দিবস। আজকের দিনটিকে বাংলার ইতিহাসের কালো দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ১৭৫৭ সালের এই দিনে দেশীয় বণিক, বিশ্বাসঘাতক ও ইংরেজ বেনিয়াদের চক্রান্তে পলাশীর প্রান্তরে ২০০ বছরের জন্য বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়। মাত্র এক ঘণ্টার প্রহসনের যুদ্ধে পরাজয় ঘটে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার।

পরাজয়ের পর নবাবের বেদনাদায়ক মৃত্যু হলেও উপমহাদেশের মানুষ নবাবকে আজও শ্রদ্ধা জানায়। প্রতিবছর সে জন্য ২৩ জুন পলাশী দিবস হিসেবে পালিত হয়। সেইসঙ্গে নবাবের সঙ্গে যারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, তাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার সঙ্গে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাশী নামক স্থানে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, তা-ই পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধটি কলকাতা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উত্তরে এবং মুর্শিদাবাদের দক্ষিণে, তৎকালীন বাংলার রাজধানী (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায়) হুগলি নদীর তীরে পলাশীতে সংঘটিত হয়েছিল।

পলাশীর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পেছনে প্রধান প্রধান কারণ হলো সিরাজ-উদ-দৌলার বাংলার সিংহাসনে বসার পর প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ইংরেজরা নতুন নবাবকে কোনো উপঢৌকন না পাঠানো এবং তার সঙ্গে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ না করা, নবাবের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইংরেজদের কলকাতায় দুর্গ নির্মাণ করা, নবাব দস্তকের অপব্যবহার নিষেধ করা সত্ত্বেও কোম্পানির নবাবের আদেশ অগ্রাহ্য করা, কোম্পানির চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করা এবং জনগণের ওপর ইংরেজদের নির্যাতন করা, ইংরেজদের একের পর এক ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও অবাধ্যতা, নবাব কর্তৃক ব্রিটিশদের দেওয়া বাণিজ্য সুবিধার ব্যাপক অপব্যবহার, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শ্রমিকদের কর ও শুল্ক পরিশোধ না করা, ব্রিটিশদের দ্বারা নবাবকে বিভিন্ন ফ্রন্টে বিভ্রান্ত করা প্রভৃতি।

পলাশীর যুদ্ধে ৫০ হাজার সেনা, ৪০টি কামান ও ১০টি যুদ্ধহাতি নিয়ে সিরাজ-উদ-দৌলার সেনাবাহিনী রবার্ট ক্লাইভের ৩ হাজার সেনার কাছে পরাজিত হয়েছিল। সিরাজ-উদ-দৌলার পরাজয়ের পেছনে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতাই বড় ভূমিকা রাখে। যুদ্ধ ১১ ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয় এবং সিরাজ-উদ-দৌলা তার পরাজয়ের পর যুদ্ধ থেকে পালিয়ে যান। রবার্ট ক্লাইভের মতে, ব্রিটিশ সেনা ২২ জন মারা গিয়েছিল এবং ৫০ জন আহত হয়েছিল।

নবাব বাহিনী প্রায় ৫০০ জন লোককে হারিয়েছিল, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ছিলেন। পলাশীর যুদ্ধের ফলে বাংলায় প্রত্যক্ষ ঔপনিবেশিক শাসনের পথ সুগম হয়। মীরজাফর বাংলার নবাব হিসেবে মুকুট লাভ করেন। এই যুদ্ধের ফলে ফরাসিরা এ দেশ থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়।

ব্রিটিশরা কর আদায়ের নামে বাংলার অধিবাসীদের ওপর কঠোর নিয়মকানুন চাপিয়ে দিতে থাকে। যুদ্ধের ফলে মীরজাফরকে বাংলার সিংহাসনে বসালেও তিনি ছিলেন নামে মাত্র নবাব, প্রকৃত ক্ষমতা ছিল রবার্ট ক্লাইভের হাতে। ফলে ইংরেজরা বাংলায় একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্যের অধিকার লাভ করে। এই যুদ্ধের পর ইংরেজ শক্তির স্বার্থে এ দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক পরিবর্তন সংঘটিত হতে থাকে। পলাশী যুদ্ধের সুদূরপ্রসারী পরিণতি ছিল সমগ্র উপমহাদেশে কম্পানির শাসন প্রতিষ্ঠা। এভাবেই এই যুদ্ধের ফলে বাংলার তথা ভারতের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত হয়।

পলাশী যুদ্ধের ইতিহাস, বিশ্বাস ঘাতকতার ইতিহাস। কিছু বিশ্বাসঘাতক চক্রান্তকারীর যোগসাজশে দেশের স্বাধীনতা বিদেশি বেনিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার ইতিহাস। ২৩ জুনের ইতিহাস প্রকৃত সোনার বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করার ইতিহাস; কিন্তু ইতিহাস থেকে কি আমরা শিক্ষা নিই? নিই না। তাই ইতিহাসের চরম ট্র্যাজেডি হচ্ছে এই ‘ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না’। আমাদের প্রত্যাশা, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যাক, এগিয়ে যাক প্রগতির দিকে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ