আমদানি কম হওয়ায় কোরবানির গরুর উচ্চমূল্য, ক্রেতার সংখ্যা কম
ঈদুল আজহার আর মাত্র ১২ দিন বাকি তবে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের পশুর হাটগুলো এখনো জমে উঠেনি। সরেজমিন হাটগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির পশু বেচাকেনা সেই অর্থে শুরুই হয়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, গবাদিপশুর আমদানি কম হওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে এবার বেড়ে যাবে গরুর দাম। ফলে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। এদিকে, ছাগলের ব্যবসায়ীরাও বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।
পশু কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজেটের মধ্যে পছন্দের পশু মেলাতে পারছেন না তারা। তাই এক হাট থেকে অন্য হাটে ঘুরতে হচ্ছে এবার।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার মাদারীয় গ্রামের খামারি আরফি হাসান তালুকদার জানিয়েছেন, গত বছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনি প্রায় ২৬৮টি বড় গরু বিক্রি করে ভালো লাভ করেন; কিন্তু চলতি বছর এসব বড় এবং মোটাতাজা গরুর চাহিদা কিছুটা কম থাকায় এবং পশু পালন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি এবার ১৫০টি গরু বিক্রির জন্য হাটে তুলেছেন। এর মধ্যে ১০০টি গরু আগেই বিক্রি হলেও গত সপ্তাহে হাটে ৫০টি গরুর মধ্যে মাত্র ৪টি বিক্রি হয়েছে।
পশু বিক্রি করে আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি। তার খামারের সব চেয়ে বড় গরুটির দাম হাঁকা হয়েছিল ২৫ লাখ টাকা, সেটি বিক্রি হয়েছে ১৫ লাখ টাকায়। এবার ৮ থেকে ১০ মণ ওজনের গরু ২ থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে তাকে।
ভূঞাপুর যমুনার তীরে গোবিন্দাসী খানুরবাড়ীর খামারিরা মুক্ত খোলা আকাশে যমুনার চরে প্রাকৃতিক ঘাস, ধানের খড় আর কচুরিপানা খাইয়ে বড় করেন তাদের গবাদিপশু। খামারিরা জানান দেশি গাভীর বাছুর থেকেই প্রতি বছর পাঁচ লাখ টাকা আয় হয়।
খামারি আব্দুল জলিল বলেন, প্রাকৃতিক ঘাস আর কচুরিপানার পাশাপাশি আমরা গরুকে চাষের নেপিয়ার ঘাস, দানাদার খাদ্য এবং খুদের ভাত দিয়ে থাকি। এতে আমাদের বাড়তি খরচ হয়। বাছুর বিক্রি করে এই খরচ পুষিয়ে নিই আমরা; কিন্তু এ বছর ভারতীয় গরু আমদানি বন্ধ থাকায় বেড়ে গেছে দেশি গরুর দাম। ফলে ক্রেতার সংখ্যাও কম।
চরবিহারী, চরচিতলিয়া ও কোনাবাড়ীর খামারিরা জানান, তারা বিভিন্ন এনজিও ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গরুর খামার করেছেন। ঈদে পশু বিক্রি কমে গেলে এসব ঋণ শোধ করতে তাদের বেগ পেতে হবে।
খামারি জাহিদ বলেন, ‘আমার একটি দেশি গরুর খামার রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি বছর ঈদে গরু বিক্রি করে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করে আসছি। সেই সঙ্গে এই টাকায় নিজের সংসারও চালাচ্ছি; কিন্তু গরুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা একদম কম।’
‘যে গরুর দাম ছিল ৫০-৬০ হাজার টাকা সেই গরু এখন কিনতে হচ্ছে ৭৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। এই অবস্থায় ছোট খামারিরা গরু কিনবেন কীভাবে আর সেটা লালল-পালন করে বিক্রি করতে গেলে আশানুরূপ ক্রেতাইবা পাবেন কোথায়?’
গোবিন্দাসী গরুর হাটের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এখানে ছোট বড় মিলে পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী রয়েছেন। ব্যবসায়ী শাকিল শেখ জানান, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৬ লাখ টাকা লোন নিয়ে গরুর ব্যবসা শুরু করেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হচ্ছে ৯ হাজার টাকা। আশা ব্যাংক থেকে নিয়েছেন এক লাখ টাকা তাকে সপ্তাহে কিস্তি দিতে হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ টাকা। সেই অনুপাতে গরু বিক্রি না হলে গুনতে হবে ক্ষতি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে