শুনানি পেছায় ‘অদৃশ্য’ কারণে, ঝুলছে ৭০০ ব্যান্ডের নিলাম
মামলার দীর্ঘসূত্রিতায় পড়ে ৭০০ ব্যান্ডের নিলাম করতে পারছে না বিটিআরসি।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ ও বিটিআরসি বলছে, অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক নামের আইএসপির সঙ্গে বিটিআরসির চলমান ওই মামলার শুনানি ‘অদৃশ্য’ কোনো কারণে বারবার পিছিয়ে যায়। এদিকে মোবাইল ফোন অপারেটরদের দাবি অনুযায়ী পুরো ৪৫ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিয়ে এই ব্যান্ডে নিলাম করতে গেলে ওই মামলায় জিততে হবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটিকে।
বিটিআরসি জানায়, এবার মামলার তালিকায় এটি ৩০ নম্বরে রয়েছে। যদি আবার পিছিয়ে না যায় তাহলে রোববার শুনানির আশা করছেন তারা।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, ‘অদৃশ্য’ এক কারণে এই মামলার শুনানি বারবার পিছিয়ে যায়। বিষয়টি অদ্ভুত।
এটি নিয়ে তিনি নিজে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আলাপ করেছেন যেন দ্রুত শুনানি করা যায়, উল্লেখ করেন তিনি।
মেজর জেনারেল (অব.) মো. এমদাদ উল বারী বলেন, মামলার রায় পক্ষে এলে পুরো ৪৫ মেগাহার্টজ নিয়েই দুই মাসের মধ্যে এই নিলাম আয়োজন করতে পারবেন তিনি। এ জন্য বিটিআরসির সব প্রস্তুতি নেয়া আছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘কে বা কারা বারবার এই শুনানি পিছিয়ে দিচ্ছে।’
অথচ আরও প্রায় চার মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি। তখন আলাপ করেছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হকের সঙ্গেও। এরপরও বিষয়টি কোথায় যেন এগোয় না। আবারও উদ্যোগ নেন তিনি।
এবার শিগগিরই এই শুনানি হবে বলে আশাবাদী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বিটিআরসির শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, শুরুর দিকে এই মামলা তালিকায় ছিল ৩৫ নম্বরে, সেবার শুনানি হলো ২৯ পর্যন্ত। এরপর তালিকায় মামলাটি পিছিয়ে হলো ৪৫ যা শুনানি পর্যন্ত আসেনি। তারপর চলে গেল ৬৫ নম্বরে, এরপর ১০০ ছাড়িয়ে, ২০০ ছাড়িয়ে। একপর্যায়ে তা তালিকার বাইরেই চলে গেল।
এর আগে এই মামলার দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বিটিআরসি এই ব্যান্ডের ২০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বাদ রেখেই ২৫ মেগাহার্টজ নিয়ে নিলাম করতে চেয়েছিল; কিন্তু সেখানে মোবাইল ফোন অপারেটররা আগ্রহ না দেখানোয় বিটিআরসি পুরো ৪৫ মেগাহার্টজ নিয়েই নিলামের সিদ্ধান্ত নেয়।
অলওয়েজ নেটওয়ার্ককে নিয়ে জটিলতা যেভাবে :
২০০৭ সালে ২১ মার্চে অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ লিমিটেড আইএসপিকে ৭০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ৭০৪-৭১০ ও ৭৩৪-৭৪০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই সময় এই ব্যান্ডে আইএমটি (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন)-এর জন্য আন্তর্জাতিক টেলিকম ইউনিয়নের (আইটিইউ) কোনো পরিকল্পনা দেয়া ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ককে ওই বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।
এরপর ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিশ্ব রেডিও কমিউনিকেশন কনফারেন্স (ডব্লিউআরসি-২০০৭)-এ এই স্পেকট্রাম আইএমটির জন্য নির্ধারণ করা হয় এবং পরে এশিয়া-প্যাসিফিক টেলিকমিউনিটি (এপিটি) ব্যান্ডটির পরিকল্পনা তৈরি করে। সেখানে দেখা যায়, অলওয়েজ অন নেটওয়ার্ককে দেয়া ৭০৪-৭১০ ও ৭৩৪-৭৪০ স্পেকট্রাম এমন অবস্থানে রয়েছে যা আইটিইউর পরিকল্পনার ৭০৩-৭৪৮ ও ৭৫৮-৮০৩ এর ৭০৩-৭৪৮ এর মাঝখানে পড়েছে।
অলওয়েজ অন নেটওয়ার্কের ওয়্যারলেস ইন্টারনেট সেবা ও গ্রাহক না থাকায় বিটিআরসি ২০১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের স্পেকট্রাম বরাদ্দ বাতিলও করে দেয়; কিন্তু কোম্পানিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়ে উচ্চ আদালতে যায়। মামলায় হেরে যায় বিটিআরসি। এরপর আপিল করে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা।
ফলে বিচারাধীন এই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিটিআরসি এখন এই ব্যান্ডের ৪৫ মেগাহার্টজের মধ্যে ২০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নিলামে তুলতে পারছে না।
অলওয়েজ অন নেটওয়ার্কের এই স্পেকট্রাম দীর্ঘদিন আটকে রাখা এবং বিটিআরসির মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাটির গাফিলতির প্রশ্ন উঠেছে, প্রশ্ন উঠেছে তৎকালীন আইনজীবীর যোগসাজশেরও।
বিটিআরসি বলছে, এই স্পেকট্রাম বরাদ্দের ক্ষেত্রে এই শর্ত ছিল যে, বিটিআরসি যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখে বা পারবে। এছাড়া ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চগতির মোবাইল ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিতে ৭০০ ব্যান্ড বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের এই মূল্যবান সম্পদ অলওয়েজ নেটওয়ার্ক বিনামূল্যে পেয়েছিল; কিন্তু তারা যে সেবার জন্য নিয়েছিল তাও ঠিকমতো করেনি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে