Views Bangladesh Logo

বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় ৩ মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ

তিন মাসের মধ্যে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে অধস্তন আদালতের জন্য ২০১৭ সালে করা শৃঙ্খলাবিধি বাতিল করেছেন আদালত। এ সংক্রান্ত রিটে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি আহমেদ সোহেল ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) এ রায় দেন।

রায়ের তিনটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশ হলো—১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ পরে যে সংশোধন করা হয়েছে, সেটি বাতিল করা হয়েছে। ১৯৭২ সালে অধস্তন আদালতের নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে ছিল। পরে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। ১৫তম সংশোধনীতে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যস্ত করা হয়। আজকের বাতিলের পর ১১৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল হয়েছে। ফলে অধস্তন আদালতের কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ সুপ্রিম কোর্টের হাতে ন্যস্ত হয়েছে।

দ্বিতীয় অংশ হলো— যেহেতু ১১৬ অনুচ্ছেদ আগের অবস্থায় ফিরে গেছে, ফলে পরিবর্তিত ১১৬ অনুচ্ছেদের আলোকে করা শৃঙ্খলাবিধি বাতিল করা হয়েছে।

তৃতীয় অংশ হলো— সুপ্রিম কোর্টের অধীনে পৃথক বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত ১৩ আগস্ট শুনানি শেষে রায়ের জন্য ২ সেপ্টেম্বর দিন রেখেছিলেন আদালত। আদালতে রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির, অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সিনিয়র অ্যাডভোকেট শরীফ ভূঁইয়া এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

গত বছরের ২৫ আগস্ট সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ এবং ২০১৭ সালের জুডিসিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং বিচার বিভাগীয় পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে সাত আইনজীবী রিট করেন। পরে ২৭ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বিচারকর্ম বিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) ও শৃঙ্খলা বিধান রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি তা প্রয়োগ করেন।

রিটকারীদের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “১১৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) এবং শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। একই অনুচ্ছেদে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করবেন। মূলত রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের সরাসরি হস্তক্ষেপ দেখা যায়, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতি ও ছুটি মঞ্জুরিসহ) এবং শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের। ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত করা হয়। পরে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে ‘সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক তাহা প্রযুক্ত হইবে’ শব্দগুলো সন্নিবেশিত করা হয়। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১-এর মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদের বর্তমান বিধানটি প্রতিস্থাপন করা হয়।”

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ