সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সরকারেরই দায়িত্ব
গত জুন মাসে লন্ডনের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান চ্যাথাম হাউস আয়োজিত নীতি সংলাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সুন্দর নির্বাচন হবে। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, এই ঘোষণা দেয়ার পর থেকেই তিনি বলে আসছেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন আয়োজনে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। কিন্তু দিন যত যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে সাধারণ নাগরিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যেও নির্বাচন ঘিরে শঙ্কা-আশঙ্কা-সন্দেহ জেগে উঠছে। এর মূল কারণ ঐকমত্যে পৌঁছানোর বদলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ, দ্বিতীয় কারণ, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি।
গত ১ অক্টোবর পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহরুল আলমও এ-কথাই ব্যক্ত করলেন। গত মঙ্গলবার রাজধানীর পুলিশ সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সক্ষমতা অর্জন ও ফ্যসিস্ট মোকাবিলা করা। তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পর পুলিশ যে ভঙ্গুর অবস্থায় চলে গিয়েছিল, সেখান থেকে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসাটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা চাই অন্তত নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ আর উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি করতে। আমাদের যে সক্ষমতা রয়েছে সেখানে পৌঁছাতে পারব বলে বিশ্বাস করি।
নির্বাচনে কোনো শক্তি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বাহরুল আলম বলেন, এখানে অনেক লোক, দল ও গোষ্ঠী। যারা পরাজিত ফ্যাসিস্ট, তারাও অবশ্যই একটি দল। এ দলের সদস্যরা অবশ্যই একটি বিরোধী শক্তি। এ ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র নিয়েও শংকর রয়েছে বলে তিনি জানান।
শঙ্কা আরো নানা দিক থেকেই রয়েছে। বিশেষ করে কে যে এখন কী অরাজকতা করে কার ঘাড়ে দোষ চাপায় সেটাই বোঝা যায়। অনেক নিরাপত্তা সত্ত্বেও এবার ৪৯টি পূজামণ্ডপে নানা ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়েছে, ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। এই যে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি এটা একদিকে যেমন হতাশাজনক আরেকদিকে তেমন উদ্বেগজনক। তারা তাহলে কারা?
এমন নানা ধরনের ঘটনাই নির্বাচনের সময় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা যাচ্ছে। এর মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদনকৃত কয়েকটি ‘পর্যবেক্ষক সংস্থা’ ভুয়া নাম-ঠিকানা নিয়েও প্র্রশ্ন উঠেছে। যদি আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে সত্যিই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে খুবই কম সময় আছে। আর মাত্র চার মাস। এর মধ্যে অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রও হাল নাগাদ হয়নি। তারপরও ইসি আশা করছে তারাও একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে।
অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের কাম্য। বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী হয়তো আগামী নির্বাচনেই প্রথমবারের ভোট দেবে। অনেক রক্তের বিনিময়ে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, তারপর গণতান্ত্রিক এক রাষ্ট্র গঠনে বর্তমান সরকারের কাছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনই আমাদের সবার সর্বোচ্চ প্রত্যাশা। সমস্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন জাতিকে একটা সুষ্ঠু-সুন্দর-নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিবেন তাই আমরা চাই। এর ব্যত্যয় হলে এ-জাতি দীর্ঘকালের জন্য আবার ডুবে যাবে অমানিশার অন্ধকালে। অন্ধকার নয়, আমাদের যাত্রা হোক আলোর পথে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে