যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউনে আকাশপথে চরম বিপর্যয়, একদিনে বাতিল ১,৪০০-র বেশি ফ্লাইট
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) কারণে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো আকাশপথে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। শনিবার (৮ নভেম্বর) একদিনেই দেশটিতে বাতিল হয়েছে এক হাজার চারশোরও বেশি ফ্লাইট, আর আরও কয়েক হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যাবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সরকারি অচলাবস্থার দ্বিতীয় দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে মিলিয়ে ১,৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়। ফ্লাইট ট্র্যাকিং সাইট ফ্লাইটঅ্যাওয়ার জানিয়েছে, শনিবার প্রায় ৬ হাজার ফ্লাইট বিলম্বিত হয়, যা আগের দিন ছিল ৭ হাজারেরও বেশি।
এর আগে মার্কিন ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) জানিয়েছিল, অচলাবস্থার কারণে বেতন ছাড়া কাজ করা বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ক্লান্তি দেখা দিয়েছে। ফলে দেশের সবচেয়ে ব্যস্ত ৪০টি বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল ১০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো হবে।
গত ১ অক্টোবর শুরু হওয়া এই শাটডাউন এখনো অব্যাহত রয়েছে। অর্থায়ন ইস্যুতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে শনিবার ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ অচলাবস্থার ৩৯তম দিন।
সরকার পুনরায় চালু করতে সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে সিনেটররা সপ্তাহান্তেও আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন। তবে এরই মধ্যে অচলাবস্থার প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনেও পড়তে শুরু করেছে-খাদ্য সহায়তা ব্যাহত হচ্ছে, বিমান চলাচলেও বিপর্যয় নেমে এসেছে।
আমেরিকান এয়ারলাইনস এক বিবৃতিতে ওয়াশিংটনের নেতাদের উদ্দেশে বলেছে, 'অচলাবস্থা দ্রুত সমাধান করুন, নইলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।'
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সবচেয়ে দীর্ঘ ফ্লাইট বিলম্ব দেখা গেছে নিউ জার্সির নিউয়ার্ক লিবার্টি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। বিকেল পর্যন্ত সেখানে গড়ে চার ঘণ্টার বেশি বিলম্বে ফ্লাইট পৌঁছেছে, আর ছাড়তে দেরি হয়েছে দেড় ঘণ্টারও বেশি। সবচেয়ে বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে শার্লট/ডগলাস, নিউয়ার্ক লিবার্টি ও শিকাগো ও’হেয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।
এফএএ জানিয়েছে, শনিবার বিকেল পর্যন্ত জন এফ কেনেডি, হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা ও লা গার্ডিয়া বিমানবন্দর থেকেও ফ্লাইট ছাড়তে দেরি হয়েছে যথাক্রমে তিন ঘণ্টা, আড়াই ঘণ্টা ও এক ঘণ্টা করে।
পরিবহন মন্ত্রী ডাফি জানান, শুধু বাণিজ্যিক বিমান নয়, ব্যক্তিগত জেট চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। 'ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোয় ব্যক্তিগত জেটের সংখ্যা সীমিত করা হয়েছে, যাতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটগুলো পরিচালনায় সুবিধা হয়,' তিনি এক্স-এ লিখেছেন।
এফএএ সতর্ক করেছে, আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। সংস্থাটি ধীরে ধীরে ফ্লাইট কমাচ্ছে—শুক্রবার ৪ শতাংশ, ১১ নভেম্বর ৬ শতাংশ, ১৩ নভেম্বর ৮ শতাংশ এবং ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ ফ্লাইট বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে।
এফএএ বলছে, 'নিরাপত্তা বজায় রাখার স্বার্থে এই ব্যবস্থা জরুরি।' কারণ বেতন ছাড়া কাজ করায় বিমান নিয়ন্ত্রকদের মধ্যে ক্লান্তি, অনুপস্থিতি ও মনোবলহীনতা বাড়ছে। অনেকে অসুস্থতার অজুহাতে ছুটি নিচ্ছেন বা অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এছাড়া ট্রান্সপোর্টেশন সিকিউরিটি এজেন্সি (টিএসএ)-এর প্রায় ৬৪ হাজার কর্মীর অধিকাংশই বেতন পাচ্ছেন না। এর ফলে বিমানবন্দর নিরাপত্তা কার্যক্রমেও প্রভাব পড়ছে। ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের সময়কার অচলাবস্থায়ও টিএসএ কর্মীদের প্রায় ১০ শতাংশ কাজ না করে ঘরে অবস্থান করেছিলেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে