Views Bangladesh Logo

ওরাকলের সঙ্গে একতরফা চুক্তি, সংশোধনসহ টাকা ফেরত চায় সরকার

রাকলের সঙ্গে করা একতরফা চুক্তি সংশোধন চায় বাংলাদেশ ডাটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল)। ওরাকলের কাছে ৩ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন ডলার ফেরতও চেয়েছে বিডিসিসিএল। ওরাকল দেশের সরকারি ডেটা-নথি বিদেশে নেয়ার কেলেংকারিতে অভিযুক্ত, এ বিষয়েও তদন্ত করছে সরকার।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নির্দেশে বিডিসিসিএল চিঠি পাঠিয়ে ওরাকলের সঙ্গে করা ‘ওরাকল ক্লাউড সার্ভিস এগ্রিমেন্ট’-এর বিভিন্ন ধারা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ও সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে।

যদিও এখন পর্যন্ত ওরাকল কর্তৃপক্ষ চিঠির উত্তর দেয়নি বা এ বিষয়ে তাদের কোনো পদক্ষেপের কথা জানায়নি। বিডিসিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. তৌফিক আল মাহমুদ বলেন, ‘একতরফা ওই চুক্তি সংশোধনে ওরাকলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আগের চুক্তির কারণে এ বিষয়ে সালিশ লন্ডনে হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেও যদি ন্যায্যতা নিশ্চিত না হয়, তাহলে আমরা আদালতে যাবে।’ দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং নিশ্চিতভাবে সবক্ষেত্রেই ডেটা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত রাখব আমরা বলে জানান তিনি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘চুক্তিতে ক্লাউড ক্রেডিট কেনার নাম করে বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের আদলে এমন অন্যায় চুক্তি করা হয়েছে, যেখানে সরকারকে ৩ বছরে ২৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে, অথচ সেই ক্লাউড ফেসিলিটি তিন বছরে সর্বমোট ৬ মিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

যেখানে ক্লাউড হচ্ছে ‘পে অ্যাজ ইউ গো’, অর্থাৎ যতটুকু ব্যবহার ততটুকুর ওপর বিল পরিশোধ, সেখানে সাবেক সরকার এমন চুক্তি করেছে, যার মাধ্যমে ক্লাউড ব্যবহার হোক বা না হোক সেখানে ১৮ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করতেই হবে, কোনো ক্রেডিট ফরোয়ার্ডিং হবে না এবং হার্ডওয়ারের মালিকানা না থেকেও বাংলাদেশ সরকারকে ডিউটি পেমেন্ট করতে হয়েছে- উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টার এই বিশেষ সহকারী।

চুক্তিতে আপত্তি যেসব বিষয়ে

হার্ডওয়্যার ও মালিকানা: চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ওরাকল মালিকানাধীন হার্ডওয়্যারের ‘ইমপোর্টার অব রেকর্ড’ হিসেবে বিডিসিসিএলকে অতিরিক্ত ৩ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শুল্ক ও কর দিতে হয়েছে। বিডিসিসিএলের দাবি, যেহেতু হার্ডওয়্যারের মালিক ওরাকল, তাই এই ব্যয় তাদের বহন করা উচিত এবং এ অর্থ ফেরত দিতে হবে।

এ ছাড়া, ছয় মাস ব্যবহৃত না হলে একতরফাভাবে হার্ডওয়্যার সরিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে ওরাকল। বিডিসিসিএল প্রস্তাব দিয়েছে, হার্ডওয়্যার সরানোর আগে লিখিত নোটিশ দিয়ে তাদের সম্মতি নিতে হবে।

আর্থিক ও পরিশোধ শর্ত: চুক্তির বার্ষিক ইউনিভার্সাল ক্রেডিট কাঠামোকে বিডিসিসিএল মূলত সক্ষমতাভিত্তিক চার্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রথম তিন বছরের জন্য নির্ধারিত (৩, ৬ ও ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) এই কাঠামোতে অব্যবহৃত ক্রেডিট বহাল থাকে না। ফলে প্রকৃত ব্যবহার মূল্য শূন্য দশমিক ৫-শূন্য দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও উল্লেখযোগ্য ক্ষতির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

বিডিসিসিএল প্রস্তাব দিয়েছে, অব্যবহৃত ক্রেডিট বহাল রাখা এবং ভবিষ্যৎ চার্জ বাজারদরের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা। চুক্তিতে নির্ধারিত ৩০ দিনের পেমেন্ট টার্মকে খুবই সীমাবদ্ধ উল্লেখ করে বিডিসিসিএল এটিকে ৯০ দিনে বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

অব্যবহৃত ক্রেডিট বহাল রাখা ও অতিরিক্ত বিল পরবর্তী ক্রেডিট থেকে সমন্বয়ের দাবিও জানানো হয়েছে। এছাড়া, নির্দিষ্ট বার্ষিক নবায়ন ফি ৬ মিলিয়ন ডলারকে সহনীয় নয় বলে আখ্যা দিয়ে বিডিসিসিএল প্রস্তাব করেছে, ন্যূনতম ক্রেডিট সীমা বাদ দেয়া হোক, তবে ১২ মাসের নবায়ন নোটিশ বহাল থাকুক। এ ছাড়া ব্যাংক গ্যারান্টির পরিবর্তে স্থানীয় আর্থিক নীতি অনুযায়ী বার্ষিক ক্রেডিটের ১০ শতাংশ সমপরিমাণ ‘রিনিউএবল পে-অর্ডার’ জমা রাখার প্রস্তাবও করা হয়েছে।

সেবা ও চুক্তির শর্ত: বর্তমান চুক্তিতে ডিআরসিসি ব্যবহার শুধু সরকারি বা সরকার-অধিকাংশ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জন্য সীমিত। বিডিসিসিএল বলছে, এতে বাজার সংকুচিত হচ্ছে এবং সক্ষমতা অপ্রয়োজনীয়ভাবে খালি থাকছে। তারা প্রস্তাব দিয়েছে, আইনি ও নিরাপত্তা মান বজায় রেখে বেসরকারি খাতেও এ সেবা দেয়া যাবে।

চুক্তির মেয়াদ বর্তমানে ৩৬ মাস। বিডিসিসিএল প্রস্তাব করেছে, এটি ৫ বছরে বাড়িয়ে মোট মূল্য ৬ মিলিয়ন ডলার (ভ্যাট ও আয়করসহ) নির্ধারণ করতে। চুক্তি বাতিলে বর্তমানে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, ওরাকল দুই মাসের নোটিশে চুক্তি শেষ করতে পারে, কিন্তু বিডিসিসিএলকে সেবা মেয়াদোত্তীর্ণের পর আরও ১২ মাস প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হয়। বিডিসিসিএল প্রস্তাব দিয়েছে, উভয় পক্ষের জন্য সমানভাবে অন্তত ১২ মাসের নোটিশ পিরিয়ড থাকবে। একই সঙ্গে নিয়মতান্ত্রিক কারণে (যেমন- আরওএইচএস কমপ্লায়েন্স) চুক্তি বাতিল হলে অতিরিক্ত ফি মওকুফ করতে হবে।

গভর্নিং ল: বর্তমানে ইংরেজ আইন এবং সালিশের স্থান লন্ডন নির্ধারিত আছে। বিডিসিসিএল প্রস্তাব করেছে, বাংলাদেশের আইন প্রযোজ্য হোক এবং সালিশ হোক ঢাকায়, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টারের (বিআইএসি) নিয়মে। এ ছাড়া, সেবা সমাপ্তির পর ডেটা রাখার সময়সীমা এখন ৬০ দিন নির্ধারিত। বিডিসিসিএল প্রস্তাব দিয়েছে, এ সময়সীমা আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ