Views Bangladesh Logo

রাষ্ট্রীয় ডেটা বিদেশে নেয়া ওরাকলকে লোন করে বিল দিচ্ছে সরকার

দেশের সরকারি ডেটা-নথি বিদেশে নেয়ার কেলেংকারিতে অভিযুক্ত ওরাকলকে লোন করে বিল দিচ্ছে বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল)। ওরাকল নিয়ে রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানি বিডিসিসিএল এমন এক বেকায়দায় পড়েছে যেখানে থেকে সহসাই উদ্ধারের কোনো পথ তারা দেখছে না। সর্বশেষ এক্সিম ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা লোন নিয়ে ওরাকল ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করেছে তারা।

বর্তমান সরকারের জাতীয় ডেটা সেন্টার কোম্পানির এতটাই দৈন্যদশা, কার্যক্রম চালানো বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বিডিসিসিএল বলছে, ওরাকল এবং অন্যান্য বকেয়া বিল পরিশোধের জন্য জরুরিভিত্তিতে এক্সিম ব্যাংক থেকে লোন নেয়া হয়েছিল। সেখানে তাদের একটি এফডিআর মেয়াদপূর্তির দ্বারপ্রান্তে ছিল। তারা এফডিআর না ভেঙে এর বিপরীতে লোন নিয়েছে।

বিডিসিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. তৌফিক আল মাহমুদ বলেন, আমরা আগের দায় পরিশোধ করছি। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে চুক্তি করা হয়েছে। এ চুক্তির মেয়াদ ২০২৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত। বিডিসিসিএলের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা নতুন করে যে চুক্তিপত্র করছি, সেখানে দেশের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে এবং নিশ্চিতভাবে ডেটা সার্বভৌমত্ব সুরক্ষিত থাকছে।’

যেভাবে বেকায়দায় বিডিসিসিএল
২০২১ সালে ১২ ডিসেম্বর বিডিসিসিএল সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ওরাকলের ডেডিকেটেড রিজিয়ন ক্লাউড কাস্টমার (ডিআরসিসি) প্রডাক্ট বা সেবা কেনার চুক্তি করে। বিডিসিসিএল এবং সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, ওই চুক্তিতে রাষ্ট্রীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়নি। চুক্তির পর সরকারের ৩৪ হাজার দপ্তরের ডেটা, নথি ব্যবস্থাপনার সব ডেটা ওরাকলে রাখা হয়। ওরাকল সেসব ডেটা সিঙ্গাপুর নিয়ে যায়।

এরপর ওরাকল যখন হাইটেক পার্কের ডেটা সেন্টারে ডিআরসিসি বসায় তখন বিডিসিসিএলকে একদিকে ওই ডিআরসিসির অর্থও দিতে হয়েছে আবার সিঙ্গাপুরে ডেটা রাখার অর্থও দিতে হয়েছে। সরকারের এসব ডেটা রাখার বিপরীতে এটুআইয়ের কাছে সর্বশেষ প্রায় ২৮৩ কোটি টাকা বিল জমেছে বিডিসিসিএলের। এটুআই বলছে, ওরাকল নিয়ে বিডিসিসিএল যে বিল করে, তা বাজারে অন্যান্য সেবাদাতাদের তুলনায় ৩০ গুণ বেশি। এটুআই জানায়, বাজেট স্বল্পতার কারণে এই পাওনা তারা পরিশোধ করতে পারছে না।

মো. তৌফিক আল মাহমুদ বলেন, এটুআইয়ের কাছে আমাদের বিপুল বকেয়া রয়েছে। তারা সে টাকা পরিশোধ করছে না। প্রতি মাসে বিডিসিসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, বিভিন্ন বিল, মেইন্টেন্যান্সসহ বেশ বড় অঙ্কের ব্যয় রয়েছে। বিপুল এই পাওনা বকেয়া থাকা সংকটের অন্যতম কারণ উল্লেখ করেন তিনি। বিডিসিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, নানা পদক্ষেপ ও কৌশল গ্রহণ করে সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানিটিকে সফলভাবে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন তারা।

৩০০ কোটি টাকা লোনের উদ্যোগ
বিডিসিসিএলের এই তীব্র অর্থ সংকটে সেবা কার্যক্রম সচল রাখতে অর্থ বিভাগ হতে ৩০০ কোটি টাকার সুদমুক্ত লোন নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অর্থ বিভাগ জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের পরিচালন বাজেট থেকে সরাসরি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বকেয়া বিল পরিশোধ করা আর্থিক শৃঙ্খলার পরিপন্থি। তাই ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে হালনাগাদ বকেয়া পরিশোধের জন্য এটুআই প্রকল্পের ‘ডাটা সংরক্ষণ ব্যয়’ খাতে পরবর্তী অর্থবছরে (প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধিসহ) প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

বিডিসিসিএল যদি এই লোন নেয়, তবে (এটুআই) অ্যাসপায়ার টু ইনোভেট প্রকল্প থেকে বকেয়া বিল পাওয়ার পর তা পরিশোধ করতে হবে। বিডিসিসিএল এবার এটুআইর সঙ্গে বিদ্যমান চুক্তিগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে এই লোন পেতে আবেদন করেছে।

ওরাকলকে যেন দায়মুক্তি!
সরকারের হাজার হাজার দপ্তরের ডেটা, নথি ব্যবস্থাপনার সব ডেটা ওরাকল কীভাবে ও কোন আইনিভিত্তিতে সিঙ্গাপুরে নিয়ে গিয়েছিল, সে বিষয়ে আজ পর্যন্ত কোনো জবাবদিহি ও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

২০২২ সালের মে মাস হতে দেশের সব সরকারি ডেটা-নথি বিডিসিসিএলের নামকাওয়াস্তে চলে যেতে থাকে ওরাকলের সিঙ্গাপুর ওসিআইয়ে। এরপর ২০২৪ সালের ৩০ মে বিডিসিসিএলের সেই সময়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আতাউর রহমান খান এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালককে চিঠি লিখে জানান যে, ওসিআই সিঙ্গাপুরে থাকা ডেটা এবার তারা বাংলাদেশে স্থাপিত ওরাকলের ডিআরসিসিতে নিয়ে আসবেন। আর ম্যাসিভ সে ডেটা পুরোপুরি বাংলাদেশে ফেরত আনতে আনতে ২০২৪ সালও ফুরায় প্রায়।

বিডিসিসিএলের চেয়ারম্যান ও তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী জানান, কীভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে এবং যারা এর সঙ্গে জড়িত- এসব বিষয়ে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের ডেটা সার্বভৌমত্ব যারা অরক্ষিত করেছে তারা যতই শক্তিশালী হোক আমরা ব্যবস্থা নেবো, তাদের আইনের আওতায় আনব।

শীষ হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করছি, এখন কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই। জাতীয় এই ডেটা সেন্টারকে আগের ভঙ্গুর দশা হতে ফিরিয়ে আনতে কার্যকর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ