Views Bangladesh Logo

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ছাড়াল ৫৭ হাজার

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ১১১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। নিহতদের ৩৩ জনই মারা গেছেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে খাদ্য ও ত্রাণ আনতে গিয়ে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ নিয়ে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত প্রায় ২১ মাসে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ হাজার ১২ জনে। আহত হয়েছেন আরও এক লাখ ৩৪ হাজার ৫৯২ জন। হতাহতদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। ইসরায়েলি বাহিনী এই সময়ে গাজার ১৫ হাজারেরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, বুধবার (২ জুলাই) স্থানীয় সময় ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দিনভর বিভিন্ন স্থানে বোমা ও ড্রোন হামলা চালায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।

আর গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর জানায়, ৪৮ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে গাজায় ‘২৬টি নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ’ চালিয়ে ৩২৩ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে আইডিএফ। এর মধ্যে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১৩৯ জন, রাত পর্যন্ত ১১১ জন এবং বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ভোর থেকে মাত্র কয়েক ঘণ্টায়ই প্রাণ গেছে আরও ৭৩ জনের, যাদের ৩৩ জন ছিলেন জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণপ্রত্যাশী। অনাহারি এসব মানুষ খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তাদের প্রাণ যায়।

গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, দিয়ের এল-বালাহতে জিএইচএফের একটি ত্রাণ কেন্দ্রের সামনে কিছু খাবার পাওয়ার আশায় কয়েক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর হঠাৎ করে বিনা উস্কানিতে গুলি শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ২৬ জন নিহত ও শতাধিক আহত হন। সেসময় অনাহারে বেপরোয়া ফিলিস্তিনিরা বিভিন্ন দিকে গুলি থেকে আড়াল নেয়ার চেষ্টা করেন। সেখান থেকে বেঁচে ফেরা লোকজন আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, গুলি শুরুর আগে কোনো সতর্কতা জানানো হয়নি। নাবুলসি গোলচত্বরের কাছে ত্রাণপ্রত্যাশীদের ওপর হামলায় অন্য ছয়জন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন।

গণমাধ্যম দপ্তরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয় নেয়া কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি জনগণের বিশ্রামের এলাকা, বাড়ির ভেতরে থাকা পরিবার, জনপ্রিয় বাজার ও গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক স্থাপনাগুলোও।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও বিবিসি জানায়, বুধবার নিহতদের মধ্যে রয়েছেন গাজার ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতালের পরিচালক মারওয়ান সুলতান ও তার পরিবারের কয়েকজন সদস্য। গাজা সিটিতে তার বাড়িতে হামলা চালায় আইডিএফ।

নিহত ডা. সুলতানের মেয়ে লুবনা আল-সুলতান বলেন, ‘একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান সরাসরি আমাদের ঘরে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বাড়ির অন্য সব ঘর অক্ষত থাকলেও কেবল বাবা যে ঘরে ছিলেন, সেটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। আমার বাবা শহীদ হয়েছেন। তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত ছিলেন না। তিনি শুধু আহত রোগীদের পাশে দাঁড়াতেন’।

একটি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, আপাতদৃষ্টিতে গাজায় জিএইচএফের ত্রাণ কেন্দ্রগুলোর পাহারায় থাকা মার্কিন ভাড়াটে সেনারাও খাবারের জন্য ছুটে আসা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর স্টান গ্রেনেড নিক্ষেপ করছে ও গুলিবর্ষণ করছে।

চিকিৎসা সূত্রগুলো জানায়, গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসের আল-মাওয়াসির একটি তাঁবুতেও হামলা চালিয়ে ১৩ জনকে হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের এক দম্পতি ও তাদের চারজন সন্তান। ইসরায়েল ঘোষিত ওই ‘নিরাপদ এলাকায়’ রাত ১২টা ৪০ মিনিটের ওই বিমান হামলায় আহত হন শিশুসহ আরও অনেকে।

গাজা সিটিতে অন্য একটি হামলায় একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হন। প্রায় একই সময় গাজা সিটির পশ্চিমে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়স্থল মুস্তফা হাফেজ স্কুলে হামলা চালিয়ে আরও ১১ জনকে হত্যা ও বহু জনকে আহত করে আইডিএফ। উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় আরও একটি হামলায় অন্তত তিনজন প্রাণ হারিয়েছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় চলাচল অসম্ভব হওয়ায় অ্যাম্বুলেন্স এবং সিভিল ডিফেন্সকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে ও রাস্তায় আটকে পড়া অনেক হতাহতের কাছে পৌঁছাতে পারেননি বলেও জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

জিএইচএফ ২৭ মে থেকে সীমিত পরিসরে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছে। তবে প্রায় প্রতিদিনই খাদ্য আনতে যাওয়া ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর সরাসরি গুলি ও বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এসব হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৬১৮ জন, আহত হয়েছেন আরও চার হাজার ৫৯৯ জন।

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (১ জুলাই) অক্সফাম, সেইভ দ্য চিলড্রেন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতো ১৭০টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও এনজিও যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে জিএইচএফকে বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জিএইচএফ ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার সুবিধা করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলে এনজিওগুলো বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ‘নিয়মিতভাবে’ খাবারের জন্য ঘুরতে থাকা বেসামরিকদের ওপর গুলি চালাচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। তারা এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায়। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ।

টানা ১৫ মাস অভিযান চালানোর পর ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রসহ মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর চাপে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে যুদ্ধবিরতির দু’মাস না যেতেই ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় হামলা চালাচ্ছে আইডিএফ।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ছয় হাজার ৪০৪ জন নিহত এবং ২১ হাজার ৭৯১ জন আহত হয়েছেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ