গাজা সিটি দখলে আরও বর্বর হামলা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর, নিহত এখন ৬৩৭৪৬ জন
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত দুজন সাংবাদিকসহ আরও ১১৩ জন ফিলিস্তিনির মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৩০৪ জন। এছাড়া চাপিয়ে দেয়া দুর্ভিক্ষে মারা গেছেন একজন শিশুসহ আরও ছয়জন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলু নিউজ জানায়, এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত ২২ মাসে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ৭৪৬ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত এক লাখ ৬১ হাজার ২৪৫ জন। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত পূর্ণমাত্রার দুর্ভিক্ষপীড়িত উপত্যকাটিতে অনাহারজনিত মৃত্যু ঘটেছে ৩৬৭ জনের, যাদের ১৩১ জনই শিশু।
‘হতাহত অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন। ফলে উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। তাই প্রকৃত হতাহত আরও বেশি’ হবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
ফিলিস্তিনের জাতীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানায়, মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) সারা দিনে নিহতদের ৮০ জনই প্রাণ হারিয়েছেন ইসরায়েলি বাহিনীর নিক্ষিপ্ত গোলায়। এর মধ্যে সাংবাদিকদের ওপর হামলায় মারা যান আল-মানারার রস্মি সালেম এবং ইমান আল-জামলি। এ নিয়ে নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৬ জনেরও বেশি। সাতজন শিশুসহ বাকি ৩৩ জন গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রে মানবিক সহায়তা সংগ্রহে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের ড্রোন হামলায় মারা গেছেন এবং আহত হয়েছেন ১৪১ জনেরও বেশি। তারা সবাই দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের পাশের আল-মাওয়াসি এলাকায় পানির লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হতাহত হন। ফলে গত ২৭ মে ইসরায়েল ও মার্কিন-সমর্থিত জিএইচএফ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিহত সাহায্যপ্রার্থী দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৩৯ জনে, আহত হয়েছেন অন্তত ১৭ হাজার ৭০ জন।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ১৩ আগস্ট থেকে বৃহত্তর সমন্বিত হামলা চালিয়ে গাজা সিটির দখল নিতে চাইছে জায়নিস্ট বাহিনী। সেখানকার বাসিন্দা ও আশ্রিত প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত ও দক্ষিণ-পশ্চিমে তাড়িয়ে দিয়ে উপত্যকাটির সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্রটিকে ইসরায়েলের অংশ ঘোষণা দিতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে আল-সাবরাসহ সিটির ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ডা. মুনির আলবোর্শ জানান, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গাজা দখলের পরিকল্পনা ‘সিদ্ধান্তমূলক পর্যায়ে’ পৌঁছানোর ঘোষণার পর গাজায় হামলা আরও জোরদার হয়েছে। ‘আরও বর্বর হয়ে ওঠা’ ইসরায়েলি সেনারা বিমান ও কামানের হামলা তীব্রতর করেছে। ফলে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর থেকেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৪৪ জন ফিলিস্তিনি, যার ৩০ জনই গাজা সিটির বাসিন্দা। এসব হামলা পরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা ও অ্যাম্বুলেন্সকে লক্ষ্য করে চলছে এবং শহরের হাজার হাজার বাড়িঘর ও ভবন ধ্বংস করে চলেছে।
তিনি জানান, ১৩ আগস্ট থেকে গাজা সিটিতে চলমান ইসরায়েলি হামলায় এক হাজার ১০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ছয় হাজার ৮ জন আহত হয়েছে। অন্যদিকে ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজার সব সীমান্ত ক্রসিং সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়ার এই অঞ্চলের ২৪ লাখ জনসংখ্যাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য নিরাপত্তা মূল্যায়ন সংস্থা (আইপিসি) উত্তর গাজায় দুর্ভিক্ষের বিষয়টি নিশ্চিত এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি আরও দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে। সংস্থাটি বলছে, গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ পাঁচ লাখ ১৪ হাজার ফিলিস্তিনি এখন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। এ মাসের শেষে এই সংখ্যা বেড়ে ছয় লাখ ৪১ হাজারে পৌঁছাবে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজায় এখনো প্রায় ৫০ জন বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন জীবিত বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের উদ্ধারের কথা বলেই ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজাজুড়ে।
চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে ফের সামরিক অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ১১ হাজার ৬১৫ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ৪৯ হাজার ২০৪ জন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে