Views Bangladesh Logo

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত বেড়ে ৫৯৮২১ জন, অনাহারে ১৩৩ জন

গাজার কিছু এলাকায় হামলায় ‘বিরতি’ এবং স্থায়ীভাবে ত্রাণ সরবরাহে ‘নিরাপদ রুট’ নির্ধারণের পরও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ২৪ ঘন্টায় বিমান ও ড্রোন হামলা এবং স্থল অভিযানে সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন আরও ৮৮ জন ফিলিস্তিনি। আহত আরও ৩৭৪ জনকে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে জোরপূর্বক অনাহারে মারা গেছেন দুজন শিশুসহ আরও ছয়জন।

হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে নিহত হন ৩৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের ১০ জন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে খাবারের জন্য এসেছিলেন। রোববার (২৭ জুলাই) ভোর থেকে নিহত হন ত্রাণপ্রার্থী ৩২ জনসহ আরও ৫৩ জন।

এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিহত বেড়ে কমপক্ষে ৫৯ হাজার ৮২১ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আরও এক লাখ ৪৪ হাজার ৮৫১ জন আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা আরও জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকার হাসপাতালগুলোতে মৃত নতুন ছয়জনসহ উপত্যকাটিতে ইসরায়েলি অবরোধ ও খাদ্য সরবরাহে বাধার মুখে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৩ জন ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মারা গেছেন, যাদের ৮৭ জনই শিশু ও ৪৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক।

২৭ মে ইসরায়েল জিএইচএফ পরিচালিত নতুন ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা চালু করার পর থেকে নিহত মোট ত্রাণপ্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ১২৫ জনে পৌঁছেছে, আহত হয়েছেন আট হাজার ২০৭ জনেরও বেশি।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, গাজা সিটির একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় একজন নারী এবং তার চার শিশু সন্তান নিহত হন। দক্ষিণ আল-মাওয়াসিতে কমপক্ষে পাঁচজন এবং কেন্দ্রীয় দেইর এল-বালাহে আরও চারজন নিহত হয়েছেন। আল-আকসার শহীদ হাসপাতাল ও নাসের হাসপাতালের সূত্র জানিয়েছে, দেইর এল-বালাহতে একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া চার ফিলিস্তিনি এবং খান ইউনিসের আল-মাওয়াসির একটি তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া অন্য পাঁচজন ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন।

অন্যদিকে উত্তর গাজায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বিমান থেকে তাঁবুতে খাবারের পার্সেল ফেললে কমপক্ষে ১১ জন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আহত হন।

এদিকে রোববার স্থানীয় সময় সকাল দশটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত গাজা শহরের দেইর এল-বালাহের আল-মাওয়াসিতে হামলায় ‘বিরতি’ দেয় ইসরায়েলি সেনারা। স্থায়ীভাবে ত্রাণ সরবরাহে ‘নিরাপদ রুট’ও নির্ধারণ করে দিয়েছে তারা। বিবৃতিতে আইডিএফ বলেছে, ‘গাজা উপত্যকার জনগণের কাছে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ ও বিতরণে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ কনভয়গুলোর নিরাপদ চলাচল নিশ্চিতে স্থানীয় সময় সকাল ছয়টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রুটগুলো ‘নিরাপদ’ থাকবে।

আল জাজিরা জানায়, গাজার ফিলিস্তিনিদের কাছে খবরটি অবাক করার মতো। তবে, ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো কীভাবে সুরক্ষিত করা হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অন্যদিকে, ইসরায়েলি সরকার আল-মাওয়াসিকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা এবং লাখ লাখ ফিলিস্তিনিকে সেখানে স্থানান্তরিত করতে বাধ্য করেছে। কিন্তু নিয়মিতভাবে দুর্বল ও জনাকীর্ণ তাঁবুতে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মানুষের ওপর মারাত্মক আক্রমণ চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে গাজার বিভিন্ন এলাকায়।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারী দেশের চাপে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও ১৮ মার্চ থেকে পুনরায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই অভিযানে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন আট হাজার ৬১৫ জন এবং আহত হয়েছেন আরও ৩২ হাজার ৩০৮ জন ফিলিস্তিনি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ