Views Bangladesh Logo

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত বেড়ে ৫৮৫৭৩ জন

গাজাজুড়ে ইসরায়েলি বাহিনীর একের পর এক হামলায় আরও অন্তত ১৩৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ৩৩০ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ৫৮ হাজার ৫৭৩ জন নিহত ও এবং এক লাখ ৩৯ হাজার ৬০৭ জন আহত হওয়ার তথ্য দিয়েছে অবরুদ্ধ উপত্যকাটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের বরাতে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইসরায়েলি সেনাদের বিমান ও ড্রোন হামলা ও স্থল অভিযানে চালানো গুলিতে মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) দিনভর ৯৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৫২ জন আহত হন। বাকি ৪৩ জন নিহত ও অন্তত ৭৮ জন আহত হন বুধবার (১৬ জুলাই) ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, বুধবার দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে খাদ্য খুঁজতে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা কাঁদানে গ্যাস ছুড়লে পদদলিত ও শ্বাসরোধে ১৫ জন ক্ষুধার্ত মানুষ মারা যান। অন্যদিকে গাজার দক্ষিণে অন্য একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছেও হামলা চালানো হলে নিহত হন আরও ১৬ জন। আগেরদিনও সেখানে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে দুজন নারী নিহত ও অন্তত ৩০ জন আহত হন।

জাতিসংঘের হিসাব অনুসারে, ২৭ মে জিএইচএফ কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে গাজায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৮৭৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সর্বশেষ হামলাগুলো এমন সময়ে চালানো হচ্ছে, যখন জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি নিয়ে সতর্কতা জারি করেছে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, আল-মাওয়াসিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের একটি শিবিরে নয়জনকে এবং গাজার উত্তরের শাতি শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা চালিয়ে আরও অন্তত ২৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। এসব হামলায় আহত হয়েছেন বহু মানুষ।

গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থা জানায়, ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে তারা। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গাজা শহরের একটি বাস্তুচ্যুত শিবিরে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় ছয়জন নিহত হওয়ার তথ্যও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার উত্তরের অন্তত ১৬টি এলাকার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে জাবালিয়া, যা আগে থেকেই হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল, সেটি রয়েছে। নির্দেশ পাওয়ার পর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং হাজারো মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেন।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, গাজার চলমান সংকটে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়লেও ইসরায়েলি হামলার মাত্রা ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে। এতে যুদ্ধবিধ্বস্ত উপত্যকাটিতে মানবিক বিপর্যয় আরও গভীর আকার ধারণ করছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা নিয়ন্ত্রিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকেই গাজায় অভিযান চালিয়ে আসছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। হামলায় ইসরায়েলে অন্তত এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

হামলার জবাবে শুরু হওয়া অভিযানে একপর্যায়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। তবে ওই বিরতি ভেঙে ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এই আক্রমণে গত প্রায় ছয় মাসে প্রাণ হারিয়েছেন আরও সাত হাজার ৭৫০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন অন্তত ২৭ হাজার ৫৬৬ জন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ