Views Bangladesh Logo

গাজা থেকে ইরান: বোমার বিস্ফোরণ ভেদ করে শুনি মানুষের আর্তনাদ

মাত্র দুই সপ্তাহ আগেও গোটা বিশ্বের দৃষ্টি ছিল গাজার দিকে। চারপাশে ছিল ধ্বংসস্তূপ, রক্তাক্ত শিশুর কান্না, শরণার্থীদের আর্তনাদ। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানুষ ছুটছিল অজানা গন্তব্যে। খাদ্যের অভাবে শিশুরা তাকিয়ে ছিল অসহায় চোখে। তাদের দৃষ্টি আমাদের বিবেককে প্রশ্ন করছিল বারবার। বোমা বর্ষিত হয়েছিল সেইসব আশ্রয়কেন্দ্রেও, যেখানে নিরাপত্তার জন্য শেষ আশ্রয় খুঁজেছিল অসহায় মানুষজন।

কিন্তু আজ সেই গাজা প্রায় নেই হয়ে গেছে সমস্ত আলোচনায় থেকে। আমরা জানি না গাজার শিশুরা এখন কেমন আছে? তাদের কাছে খাবার পৌঁছেছে কি না? চিকিৎসা পৌঁছেছে কি না? বিশ্বমিডিয়ার ফোকাস সরে গেছে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার দিকে। ইরানের পরমাণু কার্যক্রম, আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া, সামরিক প্রস্তুতি, সব কিছু এক অনিশ্চিত যুদ্ধের আঁচ ছড়িয়ে দিচ্ছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে, এশিয়াজুড়ে। বলা ভালো সমগ্র বিশ্বজুড়েই।

এই পরিবর্তন শুধু কূটনৈতিক দৃশ্যপট নয়, মানবিক বিপর্যয়ের ধারাবাহিকতার চিত্র ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে। আমরা জানি না, এই উত্তেজনার পরিণতিতে আর কত শিশু এতিম হবে, কত পরিবার গৃহহীন হবে, আর কত মানুষ খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। গাজার কান্না এখনো থামেনি অথচ বিশ্ব নতুন এক যুদ্ধের মুখোমুখি।

প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্বের এই বিবেকহীন দৃষ্টি সরে যাওয়া কি শুধুই রাজনৈতিক প্রভাবের ফল? গাজার মানুষ যখন বাঁচার জন্য সাহায্য চাইছিল, তখন কিছুই ছিল না তাদের জন্য। এখন ইরানের দিকে নজর ঘোরানো হয়েছে কারণ এর সঙ্গে বিশ্বশক্তিগুলোর কূটনৈতিক ও সামরিক ভারসাম্যের প্রশ্ন জড়িত।

আমরা ভুলে যাচ্ছি, যুদ্ধ কখনোই কেবল দুই পক্ষের ব্যাপার নয়। যুদ্ধ মানেই হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু, কয়েকটি প্রজন্মের ক্ষতি। যুদ্ধ মানেই সভ্যতার পেছনে ফেরা। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বাধলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য এক আগ্নেয়গিরির মুখে দাঁড়িয়ে যাবে। এর অর্থ হবে গাজার মতো আরও অনেক গাজা, আরও অনেক শরণার্থী শিবির, আরও অনেক মৃতদেহ।

এই সংকটে প্রয়োজন ন্যায়ের পক্ষ নেয়া। শুধু সামরিক শক্তির লড়াই নয়, মানবিক দায়বদ্ধতাও জরুরি। বিশ্বশক্তিগুলোকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে শান্তির জন্য, মানুষের জীবনের জন্য। যুদ্ধ নয়, শান্তি; এই নীতিই হতে হবে নীতিনির্ধারকদের মুখ্য অবস্থান।

মানুষ আজ যুদ্ধ চায় না। মানুষ চায় খাবার, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা। গাজা, ইরান কিংবা ইয়েমেন- সর্বত্র মানুষের আর্তনাদ একই। আমাদের দরকার একটি বিশ্বজনীন মানবিকতা যা ভৌগোলিক সীমা ও রাজনৈতিক অক্ষরেখা ছাড়িয়ে সব নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াতে পারে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ