Views Bangladesh Logo

আলু ব্যবসায়ীদের বাজারজাতকরণে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন করুন

যে কোনো ব্যবসায়ই একটা মানবসেবা এবং তার সঙ্গে নীতিনৈতিকতা সম্পর্কিত; কিন্তু যুগে যুগে দেশে দেশে দেখা গেছে অতিরিক্ত লাভের আশায় অনেক ব্যবসায়ী অসাধু প্রক্রিয়ার অংশ নেন। আখেরে তারা ক্ষতি করেন নিজেরই। লাভের বদলে তারা লোকসানের মুখ দেখেন। এতে করে তাদের নিজেদেরও যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি ক্ষতি হয় জনসাধারণেরও। কারণ যে কোনো পণ্যের সঙ্গেই একটি জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত।

গতকাল সোমবার (২৭ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দাম বাড়লে বিক্রি করবেন- এমন আশা থেকে হিমাগারে ২ হাজার ১৪৩ বস্তা আলু মজুত রেখেছিলেন ব্যবসায়ী হাফিজ উদ্দিন। তার সেই আশায় গুড়েবালি! ২১ লাখ টাকায় কেনা আলু এখন বিক্রি করেছেন ২ লাখ ৯৬ হাজার টাকায়। লোকসান গুনেছেন ১৮ লাখ টাকা। দীর্ঘদিনের জমানো পুঁজি আলু ব্যবসায় ঢেলে এখন নিঃস্ব তিনি।

প্রাপ্ত তথ্যে আরও জানা যায়, আলু ব্যবসায় নেমে ‘চোখে সর্ষে ফুল দেখা’ এমন ব্যবসায়ী শুধু হাফিজ উদ্দিন একা নন! হিমাগারে আলু মজুত রেখে এবার অর্থনাশ হয়েছে সবার। শুধু গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের একটি হিমাগারেই লোকসান দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এই হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে ৪৬০ জন আলু মজুত রেখেছিলেন। পুঁজি হারিয়ে তাদের অনেকেরই পথে বসার উপক্রম। সরকারিভাবে আলু কেনার উদ্যোগ না নেওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। একই অবস্থা মুন্সীগঞ্জ ও নওগাঁর কৃষক, ব্যবসায়ীদের।

দীর্ঘদিন আলু মজুত না রেখে যদি তারা তা আগেই বাজারে ছেড়ে দিতেন তাহলে মানুষ আরো কম দামে আলু কিনতে পারত। তাতে জনগণেরও দুটি পয়সা বাঁচত, ব্যবসায়ীরাও এত ক্ষতির সম্মুখীন হতেন না। অতিরিক্ত লাভের আশায় তারা নিজের সর্বনাশ করলেন। এই ক্ষতি শুধু কয়েকজন ব্যবসায়ীর নয়। এটা সমগ্র রাষ্ট্রের ক্ষতি। এর জন্য সরকারও দায়ী। আমাদের দেশের সরকারের উৎপাদন, বণ্টন, বাজারমূল্য নির্ধারণ নিয়ে সঠিক কোনো নীতিমালা নেই। ফলে ব্যবাসায়ীরা এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা ও সিন্ডেকেটের সুযোগ নেয়। এর আগেও দেখা গেছে পেঁয়াজ, আদা প্রচুর পরিমাণে মজুত রেখে দাম বাড়ানো হয়েছে, পরে সেই পেঁয়াজ-আদা গুদামঘরে পচেছে।

আলু উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের এই দুর্দিনে সরকারের আরো জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন ছিল। জানা যায়, সরকার ২২ টাকা দর নির্ধারণ করে দিলেও মুন্সীগঞ্জে প্রতি কেজি আলু বেচাকেনা হচ্ছে ৮ টাকা কেজি দরে। এতে কেজিপ্রতি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা। এ অবস্থায় হিমাগারে মজুত করা আলুতে এক হাজার কোটি টাকা, পচন ধরায় ৫৪০ কোটি এবং সংরক্ষণ করতে না পেরে বাড়ি থেকে কম মূল্যে বিক্রি করায় লোকসান হয়েছে ৪৯৫ কোটি টাকা। এই হিসাবে এবার আলুতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৫ কোটি টাকা। এ কারণে মুন্সীগঞ্জের ৭০ হাজার কৃষক ও ব্যবসায়ীসহ লক্ষাধিক মানুষ দুশ্চিন্তায়।

সরকার যদি যথাসময়ে প্রয়োজন অনুযায়ী আলু কিনে রাখতো তাহলে হয়তো আলু ব্যবসায়ীদের এই ক্ষতির মধ্যে পড়তে হতো না। এর পরের বছরই হয়তো দেখা যাবে কৃষকরা আলু উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে, এবং তাতে করে দেশে দেখা দিবে আলুর সংকট, ফলে আলুর দাম লাগাম ছাড়িয়ে যাবে। এটা একটি বিশৃঙ্খল বাজারব্যবস্থার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তাই আমরা চাই সরকার আলু ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়াক। আলু উৎপাদনকারী কৃষক, মজুতদার, ব্যবসায়ীদের জন্য বাৎসরিক নীতিমালা প্রণয়ন করুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ