মুরাদনগরের ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করুন
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে নৃশংস অপরাধ সংঘটনের জন্য আলোচিত হয়েছে কুমিল্লার মুরাদনগর। বিশেষ করে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে কুপিয়ে, পাথর দিয়ে থেঁতলে একই পরিবারের মা-ভাই-বোনকে হত্যা, স্থানীয় একজন স্কুল-শিক্ষিকাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ঘটনা দেশজুড়েই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল। এর পাশাপাশি আরও কিছু রোমহর্ষক সন্ত্রাসী ঘটনার চিত্র চলতি সপ্তাহে উঠে এসেছে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে।
যদিও এই প্রতিবেদনকে সংশ্লিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেলের মালিকানায় থাকা পক্ষের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য অপপ্রচার বলে আখ্যায়িত করেছেন বর্তমান সরকারের একজন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। কারণ ওই প্রতিবেদনে কুমিল্লার মুরাদনগরে গত প্রায় এক বছরের সন্ত্রাসের জন্য দায়ী করা হয়েছে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবা বিল্লাল হোসাইনকে। আমরা আলোচিত প্রতিবেদনে বিল্লাল হোসাইনের টেলিফোনে নেয়া বক্তব্য শুনেছি। সে বক্তব্যে তিনি তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
যদিও বক্তব্যের শেষের দিকে তিনি অনেকটা হুমকির সুরেই বলেছেন, ‘আমরা কিন্তু ধরব, দেখতে আছি, সবগুলোরে ধরব। কোথায় পাইছেন এসব, প্রমাণ দিয়ে যান। প্রমাণ দিতে না পারলে কোন জায়গায় যে নেব, আমরা’ তার এই বক্তব্য একদিকে যেমন টেলিফোনে ইন্টারভিউ নেয়া সাংবাদিককে প্রচ্ছন্ন হুমকি, তেমনি গত এক বছরে সন্ত্রাসপ্রবণ এলাকায় পরিণত হওয়া মুরাদনগরের পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি করে।
আলোচিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগদলীয় সব ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে বর্তমান সরকার বরখাস্ত করলেও শুধু কুমিল্লার মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাল বহাল তবিয়তে আছেন। এই চেয়ারম্যানকে একজন সম্মানিত ব্যক্তি হিসেবেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রতিবেদককে টেলিফোনে দেয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন।
স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন ওঠে, সারা দেশে সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করা হলেও শুধু মুরাদনগরে আওয়ামী লীগ দলীয় শিমুল বিল্লাল কেন বহাল তবিয়তে আছেন? আর একের পর এক সন্ত্রাসের জন্য অভিযুক্ত এই চেয়ারম্যানকে ‘সম্মানিত’ ব্যক্তি হিসেবে কেন উল্লেখ করছেন উপদেষ্টার বাবা?
প্রকৃতপক্ষে মুরাদনগর বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তির জন্য বড় ধরনের প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় প্রকৃতপক্ষে মুরাদনগরে গত ১১ মাস ধরে কী ঘটেছে, তা উদ্ঘাটনের জন্য জাতীয়ভাবে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। তাহলে মুরাদনগরে শান্তি ফিরে আসবে, সরকারের প্রতিও সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে