Views Bangladesh Logo

ভূমিকম্পের হাত থেকে মহানগর রক্ষার উপায় খুঁজুন

ভূমিকম্পে মানুষের মৃত্যুর ৯০ শতাংশই হয় ভবনধসে। তাই গতকাল রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ঢাকা থেকে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে ভারতের আসাম রাজ্যে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের ঘটনায় দেশের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ও ভবন নির্মাণে নিরাপত্তার বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এই ভূমিকম্পের আগে গত বছর তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপুলসংখ্যক মানুষ হতাহতের ঘটনায়ও এমন আলোচনা বিভিন্ন মহলে সৃষ্টি হয়েছিল।

তা ছাড়া যখন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ধস কিংবা আগুন লাগে তখন বিষয়টি দেশজুড়ে আলোচিত হয় এবং একসময় আবার আলোচনা থেমে যায়; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। তারপর ঝুঁকির মধ্যেই আগের মতো চলতে থাকে বসবাস, পাঠদান, অফিস ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম। বিচ্ছিন্ন করা হয় না ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও টেলিফোন সংযোগ। বাতিল করা হয় না হোল্ডিং নম্বর। ফলে আগুন লাগা কিংবা ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ হলে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের হিসাবে, গত ৪৮৫ বছরে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ভেতর এবং ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৫২টি মৃদু, মাঝারি ও তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ছয়টি ভূমিকম্প হয়েছিল ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে। গত এক যুগেই ঢাকার আশপাশে মোট আটটি ভূমিকম্প হয়েছে। মূলত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভূ-অভ্যন্তরের বার্মা প্লেটের নিচে ইন্ডিয়ান প্লেট চাপা পড়ে যাচ্ছে। যে কারণে সেখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। ওই শক্তি যে কোনো সময় বের হয়ে শক্তিশালী কম্পন সৃষ্টি করতে পারে। ফলে ভূমিকম্প মোকাবেলায় থেমে থাকা কাজ আমাদের এখনই দ্রুত শুরু করতে হবে।

দুঃখজনক বিষয় হলেও সত্য, ঢাকা শহরে ২১ লাখ ভবনের কথা বলা হলেও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সঠিক পরিসংখ্যান কোনো মন্ত্রণালয়ের হাতে নেই। অবশ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ঢাকায় ৭২ হাজার ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তা ছাড়া ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়াও প্রশ্নবিদ্ধ। মূলত ২০১৫ সালে নেপালে ভূমিকম্পের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকার ভবনগুলোর ভূমিকম্প ঝুঁকি চিহ্নিত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোকে লাল ও কম ঝুঁকিপূর্ণগুলোকে সবুজ রং দেয়ার কথা বলা হয়েছিল; কিন্তু কয়েকদফা এ বিষয় নিয়ে আলাপ হলেও তা এগোয়নি।

আশার কথা হচ্ছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার ২২ বছর পর ১৯৯৩ সালে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড’ প্রণয়ন করা হয়; কিন্তু আইনি জটিলতার কারণে ১৩ বছর পর ২০০৬ সালে এটিকে গেজেট হিসেবে প্রকাশ করা হয়। তবে সময়োপযোগী না হওয়ায় এবং পেশাজীবীদের দাবির মুখে ২০২১ সালে এই কোড সংশোধন করা হয়। ভবন নির্মাণে ন্যূনতম মান নিশ্চিত করাই ছিল এই আইনের লক্ষ্য। অথচ বাংলাদেশে যখন আইনই ঠিকঠাক প্রণয়ন হয়নি সেখানে মানের পরিবর্তন হবে কিসের ভিত্তিতে? এটিই এখন বড় প্রশ্ন!

তা ছাড়া শুধু বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরপরই সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা সক্রিয় হয়ে ওঠে কেন? তখন তাদের পরিদর্শন, প্রতিশ্রুতি কিংবা আশ্বাস দুর্ঘটনা ঠেকাতে কতটা ভূমিকা রাখে সেটিও এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে।

ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে অবস্থিত। তবে অবকাঠামো নির্মাণে ভূমিকম্পের ঝুঁকির বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পায়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিগত দশকগুলোতে বেশ কয়েকটি ছোটখাটো ভূমিকম্প হলেও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে গুণগতমান নিশ্চিত না হওয়ার বিষয়টি নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। প্রকৌশলীরা বলছেন, ঝুঁকি থাকলেও গত দুই দশকে ভবন নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় উল্লেখযোগ্য তেমন পরিবর্তন হয়নি। তাই ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্ঘটনা রোধে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড আইন’ থাকলেও এর বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ