Views Bangladesh Logo

দুর্নীতি রোধের কথা মুখে নয়, কাজে প্রমাণ করুন

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্নীতি, এটা পাগল ও শিশুরাও জানে। কয়েকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাংলাদেশের নিয়তি কেবল দুর্নীতির দুষ্ট চক্রে বারবার আবদ্ধ হওয়া। সে যে সরকারেই আসুক, দুর্নীতি থেকে যেন আমাদের আর মুক্তি নেই। সরকার আসে, সরকার যায়, সরকার দুর্নীতি দূর কথা মুখে বলে, কিন্তু বাস্তবে তার তেমন কার্যক্রম দেখা যায় না। ফলে দুর্নীতি চক্র একই রয়ে যায় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ। সম্প্রতি অন্তবর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এমন এক কথা বলেছেন, 'বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি। এটা একেবারে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।'

তিনি এমনভাবে কথাটা বলেছেন যেন এটা আমরা জানতাম না। গত মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে গাজীপুরের গাছা থানার সামনে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, 'দুর্নীতি যদি কোনো অবস্থায় কন্ট্রোলে আনতে পারতাম। আমরা লোকজনকে সচেতন করব এবং কেউ যাতে দুর্নীতি না করে সেটা বলব।' স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কিছু কিছু কথা শিশুর মতো সরল শোনায়। তিনি লোকজনকে সচেতন করবেন যেন কেউ দুর্নীতি না করে। যেন তিনি ধর্মগুরু, পীর; তিনি নিষেধ করলেই সবাই তার কথা নতশিরে মেনে নিবে।

দুর্নীতিদমন যেখানে রাষ্ট্রের আইনগত বিষয়, সেখানে কি মুখের কথায় কাজ হয়? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবশ্য জানিয়েছেন, পুলিশের সংস্কার কনটিউনিও হচ্ছে। কিন্তু দুর্নীতি দমনে পুলিশও কী করতে পারবে তা নিয়েও তো আমাদের সংশয় রয়েছে। কারণ আমরা তো দেখেছি বাংলাদেশে পুলিশ ক্ষমতাবানের হাতের পুতুল হয়েছে, এবং পুলিশ নিজে দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।

তাহলে দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় কী? আসলে তার জন্য প্রথমে দরকার আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রের গভীর গবেষণা। কেন আমাদের দেশের মানুষ নীতি-নৈতিককতা-মূল্যবোধ সব বিসর্জন দিয়েছে তার অনুসন্ধান। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলমান, ধর্মপ্রাণ। কথায় কথায় তারা ধর্মীয় আদর্শের কথা বলে। পান থেকে একটু চুন খসলে, সামান্যতম ধর্মীয় অবমাননা দেখলেই তারা যুদ্ধংদেহী ভঙিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এত দুর্নীতি তাহলে করছে কারা?

আমরা জানি আমাদের দেশের বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি নানারকম দুর্নীতির সাথে যুক্ত। দেশের শিক্ষক-আমলা-ব্যবসায়ি, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের মধ্যে এমন লোক কমেই খুঁজে পাওয়া যাবে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও যিনি দুর্নীতি থেকে দূরে থেকেছেন। এটা হয়েছে এ জাতির আত্মা বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে যে দুর্নীতিচক্রের সমাজ-রাষ্ট্র চলছে তা আজও বহাল।

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে আমরা আশা করেছিলাম সমাজে-রাষ্ট্রে দুর্নীতি কমবে, কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কথাই দাবি করে তিনিও আসলে অসহায়। তার কথায় অসহায়ত্বের ছাপ স্পষ্ট। তবে স্বদিচ্ছা থাকলে সত্যিই হয়তো আমাদের দুর্নীতি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কঠিন-কঠোর আইনানুগ বাস্তব প্রয়োগ প্রয়োজন। সরকার চাইলে সবই সম্ভব, এবং সরকারের সহযোগিতা ছাড়া একটা সমাজ-রাষ্ট্র কোনোভাবেই আগাগোড়া এতটা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারে না। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কথাকে আমরা সাধুবাদ জানাই, এবং আমরা চাই কেবল কথার কথা না বলে দুর্নীতিদমনে নীতি বাস্তব উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ