Views Bangladesh Logo

নারী শ্রমিকের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করুন

দেশে অভাব-অনটন এবং উপার্জনের সুযোগ কম থাকায় প্রতি বছর অসংখ্য বাংলাদেশি আয়ের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমান। কয়েক বছর ধরে বিদেশগামী পুরুষ কর্মীর পাশাপাশি নারীকর্মীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়ছে। এই নারী কর্মীরা মূলত গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে যান; কিন্তু এই প্রবাসী নারী কর্মীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

বিশেষ করে ভাগ্য বদলাতে বিদেশে যাওয়া নারীদের একটি বড় অংশই দেশে ফিরেছেন প্রজনন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা নিয়ে; কিন্তু তারা লজ্জায় ও ভয়ে এসব অসুখের কথা পরিবারকে বলতে পারেন না। এমনকি সামাজিক মর্যাদার ভয়ে তারা প্রকাশ্যে চিকিৎসা নিতেও দ্বিধাগ্রস্ত। ফলে বিষয়টি নিয়ে মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

বাংলাদেশ থেকে গত তিন দশকে বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিক গেছেন ১১ লাখের বেশি। সরকারি হিসাবে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী শ্রমিক গেছেন সৌদি আরবে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে একটি বড় ভূমিকা রাখে এসব নারী শ্রমিকের প্রবাসী আয়। তাহলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের এত উদাসীনতা কেন?

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখান থেকে হাজার হাজার নারী শ্রমিক নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। আর ফিরে আসা নারী শ্রমিকরা বিবরণ দিচ্ছেন সেখানে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নানা ধরনের নির্যাতনের। যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া এসব নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকা, চিকিৎসা না পাওয়াসহ নানা কারণে প্রজননস্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন তারা।

তা ছাড়া প্রজননস্বাস্থ্য নিয়ে দেশের দরিদ্র নারীরা মোটেই সচেতন নন। তাদের বিদেশ পাঠানোর আগে এ বিষয়ে কোনো ধারণা দেয়া হয় না। আবার বিদেশের মালিকদের বেশির ভাগ গৃহকর্মীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে যত্নবান নন। এসব কারণে তারা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়েন। সে ক্ষেত্রে সৌদি আরব বা সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে চুক্তিতে নারীর স্বাস্থ্যগত বিষয়টি প্রাধান্য দিতে হবে। পাশাপাশি বিদেশ পাঠানোর আগে নারী কর্মীদের প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।

জানা গেছে, প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবীমা নেই। কিছু ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবীমা চালু করা হলেও প্রবাসী নারীরা যে ধরনের প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে ফেরত আসেন, সেগুলো এই বীমায় কাভার করে না। এ কারণে তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারেন না। ফলে পরিবারের জন্য বোঝা হয়ে যান। অনেক অভিবাসী কর্মী মৃত্যুর দিকে চলে যান।

তাই প্রবাসী কর্মীরা যেসব রোগ নিয়ে ফেরত আসেন, সেটার ভিত্তিতে এই বীমা করা উচিত। বিদেশফেরত অনেক নারী কর্মী এতটাই মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত যে বিমানবন্দরে কর্মরত কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না। তাই বিদেশে কাজ করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার এই নারীদের কাউন্সেলিং করানো খুবই জরুরি।

আবার যেসব নারী কর্মীর মরদেহ দেশে আসছে, তাদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। কারণ আমরা দেখেছি, হার্ট অ্যাটাকের কথা বললেও তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। ধর্ষণের শিকার কোনো অভিবাসী কর্মী সন্তান নিয়ে ফেরত এলে ওই সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। ফিরে আসা নারী কর্মীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে আরও প্রবাসীবান্ধব করে তুলতে হবে।

সেইসঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসব দেশে নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সরকার চুক্তি করেছে, সেসব ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে। একই সঙ্গে নারী কর্মীদের সাপ্তাহিক ও বার্ষিক ছুটির বিষয়টি চুক্তিতে নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া তাদের বেতন, স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য নিশ্চিতকরণে গুরুত্বারোপ করতে হবে। পাশাপাশি দেশি ও বিদেশি দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে তাদের আইনি কাঠামোয় এনে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। তাই মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে বাংলাদেশি নারীদের নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার এখনই সময়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ