রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করুন
পরের জায়গা দখল করে দলীয় রাজনৈতিক কার্যালয় খোলার উদাহরণ বাংলাদেশে বহু পুরনো। এ নিয়ে অনেক হত্যা, খুন, মারামারিও হয়েছে। সম্প্রতি এরকম আরেক নির্মম হত্যাকাণ্ডের সাক্ষি হলো দেশবাসী। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জের এক এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কার্যালয় বসানো হয় একজনের ব্যক্তিগত দোকানের ভেতরে। দোকানটির প্রকৃত মালিক বহুবার অনুরোধ করেও ওই কার্যালয় সরাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি দোকানের ন্যায্য ভাড়া দাবি করলে, তাকে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করা হয়।
সংবাদমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার নাসির উদ্দিন। গত বুধবার (৩১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আড়াইহাজার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের সালমদী বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিঃসন্দেহে এটি আমাদের সামগ্রিক রাজনীতির অমানবিক চেহারার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। যে রাজনীতি মানুষকে হত্যা করে নিজের স্বার্থ রক্ষা করে, তা গণতন্ত্র তো দূরের কথা, মানবতাবিরোধী কাজ বললেও কম বলা হয়। একটি রাজনৈতিক কার্যালয় গড়ে তোলা কি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল করে হতে পারে? কেউ ভাড়া চাইলে তাকে হত্যা করা- এ কেমন রাজনীতি, কেমন সভ্যতা?
এমন কার্মকাণ্ড বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল দীর্ঘবছর ধরে করে আসছে। এটা যেন দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির আংশ হয়ে গিয়েছে। তাই একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা যদি এমন উগ্র, বেপরোয়া ও সহিংস হয়ে ওঠে, তবে জাতীয় পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে আর কী আশা করা যায়?
এই ঘটনার মাধ্যমে আমরা আবারও উপলব্ধি করি, দেশের রাজনীতিতে জবাবদিহিতার কতটা অভাব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোও যদি ক্ষমতার মোহে এমন আচরণ করে, তবে তারা ক্ষমতায় গেলে কী করবে তা সহজেই অনুমান করা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও আদালতের উচিত এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করা। শুধু হত্যাকারীদের নয়, যারা এই দোকান দখলে রাখার নির্দেশ দিয়েছে বা এতে উৎসাহ যুগিয়েছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সাম্প্রতিক এই নির্মম ঘটনাটি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, দেশে রাজনীতির সংস্কার এখন কতটা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলো যদি তাদের এই জোরজবরদস্তিমূলক পাল্টাতে না পারে তাহলে আমরা ব্যক্তি নিরাপত্তা তো হারাবই, গণতন্ত্রের স্বপ্নও ক্রমে আরো দুরাশায় পরিণত হবে।
দেশের বড় নেতারা বড় বড় কথা বলছেন, তাহলে দলের কর্মীদের তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না কেন? জাতীয় পর্যায়ের নেতারা যদি কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তাহলে এরকম ঘটনা ঘটতেই থাকবে। আর এতে করে সাধারণ জনগণ আরো আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর আস্থা হারাবে। তার সুযোগ নিবে গণতন্ত্র-বহির্ভূত শক্তি।
অথচ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শপথ ছিল আমরা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ সংঘাতমুক্ত রাখব, দল-মত নির্বিশেষে সুষ্ঠ-সুন্দর গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে তুলব? কোথায় তার নজির? এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। দেশের রাজনীতির যে সামগ্রিক সংঘাতময় চিত্র এ তারই বহিঃপ্রকাশ। আমরা সরকারকেও বলতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলোর এই শক্তি প্রয়োগের চরিত্র নিয়ন্ত্রণ করুন। অপরাধীকে রাজনীতিবিদ হিসেবে নয়, একজন অপরাধী হিসেবে শাস্তির আওতায় আনুন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে