Views Bangladesh Logo

ব্যক্তির গোপন তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

ধুনিক প্রযুক্তি ও নব্য পুঁজিবাদের যুগে তথ্য কেবল সব ক্ষমতার উৎস নয়, অনেক ক্ষেত্রে মারণাস্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর। রাষ্ট্রের গোপন তথ্যের মতো ব্যক্তির গোপন তথ্যও এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। ব্যক্তির অজান্তে তার কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ হয়ে গেলে সেটা শুধু তাকে বিব্রতই করে না, তার অস্তিত্বকেও হুমকির মুখে ফেলতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, ফোন নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট কিংবা স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত তথ্যগুলো ব্যক্তির একান্তই গোপন তথ্য হিসেবে বিবেচিত। এগুলো একজন মানুষের অস্তিত্বের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত; কিন্তু এই অনলাইন প্রযুক্তির যুগে ব্যক্তির গোপন তথ্য প্রতি মুহূর্তেই হুমকির মুখে পড়ছে। নিরাপত্তাহীনতার এ এক নতুন বাস্তবতা।

আগে মানুষ ভাবত শুধু টাকা-পয়সা, জমিজমা কিংবা সম্পদ চুরি হবে। এখন মানুষকে এক নতুন আতঙ্ক তাড়া করছে- তার পরিচয়, তার ব্যক্তিগত তথ্য, তার গোপনীয়তা চুরি হয়ে যাচ্ছে। আর এই তথ্য যদি অসৎ কারও হাতে গিয়ে পড়ে তাহলে তা দিয়ে জালিয়াতি-প্রতারণা থেকে শুরু করে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। ব্যাংক লেনদেন থেকে শুরু করে অনলাইনে জাল অ্যাকাউন্ট খোলা সবই সম্ভব এর মাধ্যমে। সবচেয়ে আতঙ্কজনক বিষয়, এখন নির্বাচনেও ব্যাপক কারচুপি হয় এসব গোপন তথ্যের মাধ্যমে।

এরকম এক ভয়াবহ বাস্তবতার মধ্যে বাংলাদেশে ব্যক্তির গোপন তথ্য অর্থের বিনিময়ে বিক্রি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আজ রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, টাকা দিলেই মিলছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এবং ব্যাংক ব্যালেন্সের মতো ব্যক্তির গোপনীয় তথ্য। ফেসবুকের মতো সামাজিক মাধ্যম, নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং অ্যাপসের মাধ্যমে এই কার্যক্রম চলছে। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করলে মিলছে যে কোনো ব্যক্তির গোপন তথ্য। এ জন্য শুধু মোবাইল ফোন নম্বর ও এনআইডি নম্বর দিলেই চলবে।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এমনই একটি অ্যাপসের নাম ‘সব এখানে’। একই নামে একটি ওয়েবসাইটও চালু থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এই চক্র অ্যাপসটির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে শুরু করে ব্যাংক ব্যালেন্সসহ মোট ২৫ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চক্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ব্যাংক ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আইটি কর্মীরাও জড়িত থাকতে পারেন। এই অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুললেই কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলছে। অ্যাকাউন্ট খোলার সময় ই-মেইল ও মোবাইল নম্বর দেয়া বাধ্যতামূলক এবং অ্যাপসের অ্যাকাউন্টে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা রিচার্জ করতে হয়।

চক্রের সার্ভিস চার্জ খুবই কম। তিন মাসের কললিস্টের সঙ্গে লোকেশনের তথ্য মিলছে মাত্র ১ হাজার টাকায়। এনআইডি কার্ড নম্বর মিলছে মাত্র ১১০ টাকায়। অন্যের ফোনের এসএমএস পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার টাকায়। ৩০০ টাকা দিলে মিলছে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সব তথ্য। এবার ভাবুন, একজন ব্যক্তির জন্য এই তথ্যগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ আর তার অজান্তে এগুলো প্রকাশ হয়ে গেলে একজন ব্যক্তির কী ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে!

সচেতন নাগরিক মাত্রই বুঝতে পারছেন বিষয়টি কতটা উদ্বিগ্নজনক। এ ক্ষেত্রে দায় এড়াতে পারে না রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোও। কারণ এসব তথ্য সাধারণত সরকারি বা আধাসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানেই থাকে। যদি সেখান থেকেই ফাঁস হয়ে যায় তবে নাগরিকের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন না করার দায়ভারও তাদের নিতে হবে। অনতিবিলম্বে এ নিয়ে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের অবশ্যই কঠোর শাস্তির আওতায় আনতে হবে, সে যে-ই হোক। ব্যক্তির গোপন তথ্য ফাঁস, কেবল ব্যক্তি না, পুরো রাষ্ট্রকেই হুমকির মুখে ফেলতে পারে। একই সঙ্গে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষায় সময়োপযোগী আইন প্রণয়নও জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ