Views Bangladesh Logo

দেশের মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকার; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আজ দেশের ৩১ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ছাড়া ৪৮ দশমিক ২ শতাংশ মানুষের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। গত সোমবার রাজধানীতে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিতে এক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অপুষ্টির কারণে দেশে প্রতি চারজনের একজন শিশু খর্বকায়। আর প্রতি তিনজনের একজন নারীর মধ্যে একজন রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন। এ ছাড়া অনেক মানুষই অপুষ্টি, অরিরিক্ত ওজন, ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতিতে ভুগছেন। এসব মানুষের শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং উৎপাদনশীলতায় তারা ভূমিকা রাখতে পারছেন না।

বাংলাদেশের মানুষের যে খাদ্যনিরাপত্তা কমছে এ চিত্র বাজারে গেলেও বোঝা যায়। রাজধানী ঢাকা শহরে এখন একই বাজার কয়েকটি বিভাগে বিভক্ত। উচ্চবিত্ত-মধ্যবিত্তদের সঙ্গে নিম্নবিত্তদের বাজারের চিত্র আলাদা। সেখানে একটু কম দামে তুলনামূলকভাবে খারাপ কাঁচা সবজি ও মাছ পাওয়া যায়। এক সময় সেখানে কেবল নিম্নবিত্তদেরই ভিড় ছিল, এখন সেখানে মধ্যবিত্তরাও ভাগ বসাচ্ছেন। আর বসাবেনই-বা না কেন? যেভাবে তরিতরকারির দাম বাড়ছে- এ ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় নেই। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারও এখন নিয়মিত মাছ-মাংস খেতে পারে না। মাছ বলতে তাদের পাতে ওঠে তেলাপিয়া, পাঙ্গাস বা সামুদ্রিক কিছু সস্তা মাছ। ডিম-দুধও খাওয়া হয় না অনেক পরিবারের। ফল তো চোখেই দেখেন না তারা।

বৈশ্বিক দারিদ্র্য বিমোচনে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অবদান রাখার জন্য ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি এবং তার স্ত্রী এসথার ডুফলো। তাদের গবেষণাগ্রন্থ ‘পুওর ইকোনোমিক্স’ থেকে জানা যায় কিছু দেশে দরিদ্রতা একটা দুষ্টুচক্রের মধ্যে কাজ করে। এই দুষ্টুচক্রের একটা খারাপ কারণ পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব। বাংলাদেশও যে নানা দিক দিয়ে এই দুষ্টু পড়েছে বলাইবাহুল্য। ৩১ শতাংশ মানুষ যদি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন তাহলে তা নিঃসন্দেহে আশঙ্কাজনক এবং সামগ্রিক অর্থনীতে তা ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। তাদের অক্ষমতার কারণে যে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হবে তাতে আরও খাদ্যসংকট বাড়বে। আশঙ্কা করা যায় অচিরেই খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে এবং উৎপাদনশীলতাও কমবে।

খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। এখনো আমাদের খাদ্যের বিরাট একটা অংশ আমদানিনির্ভর। দ্বিতীয় সংকট হচ্ছে, যেভাবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে সেভাবে মানুষের আয় বাড়ছে না। বরং দিন দিন বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। এসবই দেশের জন্য অশনিসংকেত। এটা শুধু পুষ্টিহীনতা বাড়াবে না, উৎপাদনশীলতা বাড়াবে না, অনেক অপরাধও বৃদ্ধি করবে। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলেও বাংলাদেশ এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে পড়ছে।

খাদ্যনিরাপত্তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, এটি একটি বৈশ্বিক উদ্বেগ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, তীব্র খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকা বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে চতুর্থ স্থানে আছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক খাদ্যসংকট নিয়ে প্রকাশিত ‘গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস ২০২৫’-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। তাহলে সহজেই অনুমেয়, আমরা কতখানি খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সরকার যদি এখনই মানুষের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ না নেয় তাহলে বাংলাদেশ হয়তো শিগগিরই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। আমরা চাই এই তথ্য আমলে নিয়ে সরকার দ্রুত খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করুক। দারিদ্র্য হ্রাস, বৈষম্য কমানো, কৃষিতে উন্নতি ছাড়া এ থেকে উত্তরণের পথ খোলা নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ