Views Bangladesh Logo

সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি নিয়ে বিতর্কের অবসান চাই

য়মনসিংহে শিশু একাডেমির নতুন একটি ভবন বানানোর জন্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত বাড়ি- ঘটনাটি বেশ কদিন ধরেই সংবাদমাধ্যমের আলোচনার বিষয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বেশ আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। সত্যজিৎ রায় বাংলা সাহিত্য-চলচ্চিত্রের দিগ্বিজয়ী ব্যক্তিত্ব, তার পিতা সুকমার রায়, পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়ও ছিলেন বাংলা ভাষাসাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব, শিশু সাহিত্যের পথিকৃৎ।

তাদের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে- এই খবরে স্বাভাবিকভাবেই দেশের সংস্কৃতিমনা মানুষরা আহত হয়েছেন; কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক ডিসি মফিদুল আলম গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, যে জমি বা বাড়িতে সত্যজিৎ রায় বা তার পূর্বপুরুষের বলে দাবি করা হচ্ছে; সরকারি রেকর্ড ও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে কোথাও তাদের কারও নাম পাওয়া যায়নি। আরএস রেকর্ডে এটি বাংলাদেশ সরকারের নামে লিপিবদ্ধ।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ময়মনসিংহ নগরে থাকা শশীলজের পেছনের সড়কটির নাম হরিকিশোর রায় রোড। হরিকিশোর রায় ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া জমিদারবাড়ির জমিদার। তিনি উপেন্দ্রকিশোর রায়, সুকমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ। এ সড়কে প্রাচীন একতলা ভবনটি ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ব্যবহার করা শুরু করে। গত ১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ ভবনটিতে কোনো কার্যক্রম চালানো যায়নি এবং এটি পরিত্যক্ত ছিল। শিশু একাডেমির কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণের জন্য গত কয়েকদিন চলছে প্রাচীন বাড়িটি ভাঙার কাজ।

এ নিয়ে শুধু দেশে নয়, ভারত সরকারও আপত্তি জানিয়েছে। বাড়িটিকে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের স্মৃতিবিজড়িত উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাড়িটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক নয়াদিল্লি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাড়িটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে।

প্রশ্ন হচ্ছে, যে বাড়ি ঐতিহাসিকভাবে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি হিসেবে পরিচিত সেখানে কাগজপত্রে তাদের কারও নাম নেই কেন? আর কাগজপত্রে নাম না থাকলে তা কীভাবে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি হিসেবে পরিচিত পেল?

কালের বিবর্তনে অনেক ইতিহাসই হয়তো মুছে যায়; কিন্তু কাগজপত্রে লেখা না থাকলেও বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। দুঃখজনক বিষয়, ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভাড়া বাসায় একাডেমির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সব প্রক্রিয়া মেনে স্থাপনাটি ভাঙা হচ্ছে। এখানে আপাতত একটি আধাপাকা স্থাপনা হবে।’

৩৬ শতাংশ জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাটি ঠিক রেখে ৪-৫ রুমের আধাপাকা একটি স্থাপনা করার সুযোগ কি ছিল না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়িটি থাকলে শিশুদের চলাচলে ঝুঁকি থাকত।’ বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তার জানা ছিল না বলেও স্বীকার করেন তিনি।

শতবর্ষী যে কোনো বাড়ি ভাঙার আগে তো অন্তত শতবার চিন্তা করা উচিত। শতবর্ষী যে কোনো স্থাপনাই তো ঐতিহাসিক মূল্য অর্জন করে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণের কোনো তাগিদ নেই। পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবন দেখেই ভেঙে ফেলার পাঁয়তারা করে স্বার্থান্বেষী মানুষ। তারা জানতে চায় না এগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য। এর আগে এরকম বহু ঐতিহাসিক ভবন ভাঙা হয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহীতে মুছে ফেলা হলো ঋত্বিক ঘটকের শেষ স্মৃতিটুকু। রাতের আঁধারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে কালজয়ী এই চলচ্চিত্রকারের পৈতৃক বাড়িটি। এসব ঘৃণ্য কাজের জন্য একদিন আমাদের ইতিহাসের কাঠগড়ায় অবশ্যই দাঁড়াতে হবে।

এখন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়িটি নিয়ে যে বিতর্ক চলমান দ্রুত তার অবসান করা হোক। বাড়িটি যারই হোক, ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায় তার শেষ স্মৃতিটুকু যতটুকু পারা যায় রক্ষা করা হোক। এ ধরনের আর কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সে ব্যাপারেও সরকার সোচ্চার ভূমিকা রাখুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ