বন্যা-জলাবদ্ধতা-দুর্যোগকবলিত মানুষের দুর্ভোগ দূর করুন
এবার জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝিতেই পুরো বর্ষা শুরু হয়ে গেল। গভীর নিম্নচাপের কারণে সারা দেশে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে। এতে দেশের অন্তত ৬ জেলায় আগামী দুই দিনের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে হাঁটুপানি জমে গেছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলের বিভিন্ন অঞ্চলে গতকাল জলোচ্ছ্বাস হয়।
আজ শুক্রবার (৩০ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, অত্যধিক বৃষ্টির কারণে দেশের বিভিন্ন নৌপথের ফেরিও চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বৃষ্টির ফলে রাজধানীসহ দেশের একাধিক শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে- ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। তবে শনিবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
পরিস্থিতির সাময়িক উন্নতি হলেও মনে রাখতে হবে এটা মাত্র জ্যৈষ্ঠ মাস। সামনে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস আসছে। এখন ভাদ্র মাসেও প্রচুর বৃষ্টি হয়। তার সঙ্গে সমুদ্রে গভীর নিম্নচাপেরও আশঙ্কা রয়েছে। নিম্নচাপ মানে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় একটানা কয়েকদিন বৃষ্টিপাত। আর দু-একদিন একটানা বৃষ্টি হলেই রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা পানির নিচে তালিয়ে যায়। এর কারণ আমাদের পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালী একেবারেই ঠিক নেই। সরকারের পর সরকার আসে, এসব নিয়ে নানা কথা বলে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। অথচ, খোঁড়াখুঁড়ি, পাইপ বসানো ঠিকই চলছে। এখনো খোঁড়াখুঁড়ি, পাইপ বসানো চলছে পুরোনো ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলিতে; কিন্তু ফলাফল শূন্য। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা ছাড়া এগুলো কাজের কাজ কিছুই করে না।
উপকূলবাসীর দুর্ভোর কমানোর বিষয়েও অনেক দিন ধরে অনেক কথা হচ্ছে; কিন্তু সামান্য জলোচ্ছ্বাসেই এখনো উপকূল অঞ্চল ভেসে যায়। উপকূল অঞ্চলে কেন এখনো উঁচু ও শক্ত বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বাঁধ নির্মাণের নামে গাছ কাটা হয়, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বাঁধ অনেক জায়গায় নির্মাণও করা হয়; কিন্তু সামান্য জলোচ্ছ্বাসেই তা ভেঙে যায় বা ডুবে যায়। এ কেমন বাঁধ? বাঁধ নির্মাণের নামে কোটি কোটি সরকারি টাকা কেন জলে ফেলা হচ্ছে তা জানতে চান উপকূলবাসী।
এবারের আগাম বন্যা আমাদের জন্য সতর্কসংকেত। দ্রুত যদি এই সংকট মোকাবিলা করা না যায় সামনে তা আরও বাড়বে। গতবারের বন্যার কথা আমাদের স্মরণ রাখা উচিত ছিল; কিন্তু আমরা রাখিনি। নদীগুলো খনন করিনি। জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ ম্যানেজমেন্ট ঠিক করিনি। প্রতি বছর বর্ষা এলেই রাজধানী ঢাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে। তৈরি হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। মাঝারি মাত্রার বৃষ্টিতেও তলিয়ে যায় অনেক এলাকা। বন্ধ হয়ে পড়ে যানবাহন চলাচল, দুর্ভোগে পড়ে সাধারণ মানুষ। এই সংকট কেবল সাময়িক দুর্ভোগ নয়, বরং একটি দীর্ঘদিনের অব্যবস্থাপনার ফল।
আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব এসব সমস্যা দূর করা হোক। বন্যা-জলাবদ্ধতা-দুর্যোগকবলিত মানুষের দুর্ভোগ দূর করার জরুরি ব্যবস্থা এখনই গ্রহণ করা হোক। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ও সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া এ থেকে মুক্তির উপায় নেই।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে