Views Bangladesh Logo

জনপ্রশাসন সংস্কারে ক্যাডারদের দ্বন্দ্ব দূর করুন

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রের আমূল সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল গত ৩ অক্টোবর গঠিত জনপ্রশাসক সংস্কার কমিশন। পুরো জনপ্রশাসনের খোলনলচে বদলে দিতে ১০০টিরও বেশি সুপারিশ নিয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। 

প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর কমিশন জানিয়েছিল সব সুপারিশই বাস্তবায়নযোগ্য; কিন্তু প্রতিবেদন জমা হওয়ার পর আমরা জানতে পারলাম, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ক্যাডারদের বড় ধরনের মতানৈক্য চলছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে কমিশনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে তারা রাস্তায় নামেন যা সে সময় দেশব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে আমরা জানতে পারলাম, ক্যাডারদের দ্বন্দ্বে আটকে আছে প্রশাসনিক সংস্কার।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বৈঠক হয় গত ২২ মে। বৈঠকে তিন পক্ষ মিলে একটি যৌথ সুপারিশ দেয়ার পরামর্শ দেয় ঐকমত্য কমিশন। পরামর্শ অনুযায়ী, গত ৩০ জুন তিন পক্ষ একসঙ্গে আলোচনায় বসলেও কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। ফলে জনস্বার্থমূলক অনেক সুপারিশও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।

এর মধ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮ সুপারিশের মধ্যে আশু বাস্তবায়নযোগ্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ১৮টি। এর মধ্যে মাত্র তিনটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর বাইরে ছয়টি সুপারিশ যুক্ত করা হয়েছে জুলাই সনদে। তার মানে আশু বাস্তবায়নযোগ্য আরও ৯টি সুপারিশ বাকি রয়ে গেছে, বাকিগুলোর কথা তো বাদই। এভাবে চলতে থাকলে সুপারিশগুলো কবে বাস্তবায়ন হবে আমরা জানি না।

আমরা জানি সংস্কার আটকে যাওয়ার কারণ উপসচিব পদ। উপসচিব পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের ৫০ শতাংশ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ৫০ শতাংশ সুযোগ পাবে বলে জানিয়েছিল সংস্কার কমিশন। বর্তমানে এই হার ৭৫:২৫। কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির হার আরও কমবে। এরপর থেকেই মূলত ক্যাডাররা ঐকমত্য কমিশনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এখন আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তারা আপত্তি তুলছেন। ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। তবে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে জনপ্রশাসন সম্পর্কিত সুপারিশ রয়েছে ছয়টি। এই ছয় সুপারিশ নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে।

এখন এভাবে মতানৈক্য সৃষ্টি হলে সংস্কার শুধু বিলম্ব না, অনেক ক্ষেত্রে অনিশ্চিত হয়ে যাবে। প্রথমে আমরা শুনেছিলাম মৌলিক কিছু সংস্কারের পরেই নির্বাচন হবে, এখন শুনছি নির্বাচিত সরকার এসেই সংস্কার করবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার এসেও মৌলিক কোনো সংস্কার করতে পারবে না। অর্থাৎ রাষ্ট্রের খোলনলচে আসলে একই রয়ে যাবে। তাহলে প্রশ্ন, যদি পুরোনো রাষ্ট্রব্যবস্থাই বহাল থাকে তাহলে এত প্রাণের বিনিময়ে যে গণ-অভ্যুত্থান হলো তার বিনিময়ে আমরা কী পেলাম? রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার না হলে গণ-অভ্যুত্থান মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাই আমাদের প্রত্যাশা ক্যাডারদের দ্বন্দ্বে যেন কোনো সংস্কার আটকে না থাকে। জনপ্রশাসনের মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে সরকারকে অবশ্যই ক্যাডারদের দ্বন্দ্ব নিরসন করতে হবে। যে কোনো কারণেই যদি মৌলিক সংস্কার ব্যর্থ হয়, তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাঁধেই চাপবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ