Views Bangladesh Logo

সাত মাসে ২৫৯ শিশু খুন

শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

দেশে শিশু নির্যাতনের ঘটনাকে গণমাধ্যমের খবর হতে প্রায়ই দেখা যায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, শিশুরা অপরিচিত ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি নির্যাতিত হয় পরিচিতদের দ্বারা; কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এ ঘটনাগুলো প্রকাশ হয় না। লোকলজ্জা ও সামাজিক বন্ধনজনিত কারণে বিষয়গুলো পরিবারের মধ্যেই মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। এসব নির্যাতন বন্ধে দেশে ইতিবাচক আইন ও নীতিমালাও আছে। কিন্তু যথাযথ আইনের প্রয়োগ ও সচেতনতার অভাবে এখনো দেশে শিশু নির্যাতনের পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক।

আজ সোমবার (১১ আগস্ট) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর বলছে, বিপদগ্রস্ত শিশুদের সাহায্য করতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের চালু করা চাইল্ড হেল্পলাইনে গত জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত সাত মাসে সহায়তা চেয়ে ফোনকল এসেছে ২৬ হাজার ১০০টি। গত বছরের একই সময়ে হেল্পলাইনে ফোন এসেছিল ১৯ হাজার ২৬৫টি। গত বছরের তুলনায় এ বছর শিশু নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনায় সহায়তা চাওয়ার ঘটনা বেড়েছে প্রায় সাত হাজার।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানেও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার চিত্র দেখা গেছে। তাদের তথ্য মতে, গত সাত মাসে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৬৪০ শিশু। গত বছরের একই সময়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল ৪৬৩ শিশু। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৩০৬ শিশু। আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৭৫। তার আগের বছর (২০২৩) একই সময়ে সহিংসতার ঘটনা ছিল ৬১৮ এবং ধর্ষণের শিকার হয় ১৯৪ শিশু।

সমাজে শিশু নির্যাতন ও হত্যা কেমন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তার একটা উদাহরণ দেয়া যাক, গত ১৩ জুলাই ময়মনসিংহের ভালুকায় মা ও দুই শিশুসন্তানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যায় জড়িত অন্য কেউ নন, শিশুদের আপন চাচা নজরুল ইসলাম। গ্রেপ্তারের পর তিনি হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ ক্ষেত্রে গবেষণা বলছে, পারিবারিক অস্থিরতা, হতাশা, মানসিক অসুস্থতা, মাদকাসক্তি, দাম্পত্য টানাপড়েনের কারণে অনেক অভিভাবক নিজের রাগ, ক্ষোভ ও হতাশা শিশুদের ওপর চাপাচ্ছেন। এ কারণে শিশু নির্যাতন বাড়ছে। এ থেকে উত্তরণে শিশুদের সঙ্গে আচরণ আরও সংযত ও মানবিক হতে হবে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহযোগিতা, শিশুদের জন্য নিরাপদ ও ভালোবাসাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করার ওপর জোর দিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে শিশু নির্যাতনের ফলে শুধু ওই শিশু একা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাষ্ট্র, তথা সমাজসহ সবাই। যে শিশু তার পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদে পরিণত হতে পারত, শিশু নির্যাতনের ফলে তা ব্যাহত হচ্ছে। কাজেই শুধু শিশুদের জন্য নয়, রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শিশু নির্যাতন বন্ধ করা খুব জরুরি।

দেশে দারিদ্র্য আছে, তবে এটি একমাত্র সমস্যা নয়। সে ক্ষেত্রে দেশের ১০ লাখ পথশিশুর সমস্যাই বলে দেয়, এখানে অন্যান্য কারণও আছে। বিশেষ করে পারিবারিক নির্যাতন একটা বড় সমস্যা যা অনেক সময়ই পারিবারিক বন্ধন ভেঙে দেয়। ফলে অনেক শিশু তাদের পরিবার ছেড়ে পথে চলে আসে। বর্তমানে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১৭ লাখের বেশি। তারা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত। বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে তাদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতনের কথা। অনেক ক্ষেত্রে তাদের হত্যাও করা হয়। অথচ এসব শিশুর উন্নয়নে যথাযথ প্রকল্প গ্রহণপূর্বক বাস্তবায়ন করা হলে এরাই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ উন্নয়নে কাজ করতে পারত। বলা চলে, শিশুদের অধিকার যদি বাস্তবায়ন না হয় তাহলে শিশুরা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠবে না। এ অবস্থায় দেশও তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না।

তাই সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিশুদের যথাযথ অধিকার, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে শিশুদের জীবনের মানোন্নয়নে অবৈতনিক শিক্ষার প্রচলন, উপবৃত্তি প্রবর্তন, বিনামূল্যে বই বিতরণ, নারী শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সরকার জাতীয় শিশুনীতি ও নারী উন্নয়ননীতি প্রণয়ন করেছে। গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফলে বাল্যবিবাহ, নির্যাতন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও এখনো প্রত্যাশিত হারে কমেনি। তাই শিশুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং নির্যাতন ও নিপীড়নমুক্ত সমাজব্যবস্থ্যা। সেই সঙ্গে শিশুর প্রতি আপনজনসহ সবাইকে মানবিক আচরণ করতে হবে এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ