খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং: বাংলাদেশের জন্য টেকসই ভবিষ্যৎ
সকালের চায়ের সঙ্গে বিস্কুটের বদলে যদি আমরা তার প্যাকেটটাই খেয়ে ফেলতে পারতাম? অথবা পানি খাওয়ার পর যদি বোতলটাও খেয়ে ফেলা যেত? শুনতে অদ্ভুত লাগলেও—এটাই হতে পারে ভবিষ্যৎ!
বিশ্বজুড়ে প্লাস্টিক বর্জ্য এখন একটি গুরুতর সংকট, যার সমাধান করা বেশ কঠিন। কাগজের মোড়ক বা পাটের ব্যাগ সাময়িকভাবে বর্জ্য কমাতে সাহায্য করলেও পরিবেশ দূষণের মূল সমস্যা দূর করতে পারে না। কল্পনা করুন এমন এক ধরনের প্যাকেজ—যা পরিবেশবান্ধব, স্বাভাবিকভাবেই নষ্ট হয়ে যায়, আবার খেয়েও ফেলা যায়! হ্যাঁ, গবেষকেরা এমনই খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং তৈরি করেছেন।
কোন আইসক্রিম এই ধারণারই একটি সহজ উদাহরণ—যার কোন আমরা প্রতিনিয়ত খেয়ে ফেলি, যা এক ধরনের খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং। এটা প্রমাণ করে যে খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে এবং এর গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে। কিন্তু এটি কি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো? এটি কি খাবারের স্বাদ বা পুষ্টিগুণ নষ্ট করে? এসব জানতে হলে আমাদের বুঝতে হবে খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং আসলে কী এবং কীভাবে তৈরি হয়।
খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং সরাসরি ফল ও সবজিতে প্রলেপ হিসেবে থাকে, অথবা চিটোসান, অ্যালোভেরা জেল, স্টার্চ, সেলুলোজ, ও বিভিন্ন মোমজাতীয় উপাদান দিয়ে তৈরি হয়। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে এসব প্রলেপ ফল ও সবজির পানি কমে যাওয়া, ওজন হ্রাস, রঙ পরিবর্তনের মতো সংগ্রহোত্তর ক্ষতি কমায়। কখনও কখনও এসব খাদ্যযোগ্য ফিল্মে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, প্রোবায়োটিক বা পুষ্টিগুণ যোগ করা হয়—যা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে, স্বাদ বাড়ায় এবং খাদ্য গ্রহণের অভিজ্ঞতা উন্নত করে। গবেষকেরা এমনকি মাছের অংশ, মুরগির হাড়সহ বর্জ্য উপাদান থেকেও সুস্বাদু ফিল্ম তৈরি করেছেন, যা বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও সহায়ক।
বিশ্বব্যাপী ফল, সবজি, মাংস, সামুদ্রিক খাবার ও পানীয় প্যাকেজিংয়ে খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনো এটি গবেষণামূলক পর্যায়ে সীমিত। গবেষণায় দেখা গেছে, চিংড়ির খোল থেকে তৈরি চিটোসান প্রলেপ আম ও পেয়ারার সংরক্ষণকাল উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে পারে—যা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে রপ্তানির জন্য এ প্রযুক্তিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বাড়ছে।
স্থানীয় খাদ্য ব্যবসাগুলিও তাদের স্ন্যাকস বা বিস্কুটে খাদ্যযোগ্য কোটিং ব্যবহার করতে পারে। বাংলাদেশে চিংড়ির খোল, পোলট্রির বর্জ্য, মাছের অংশ, আলু, চাল—এগুলো সবই খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং তৈরির উপযোগী উপাদান।
তবে কিছু খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং উপাদান আর্দ্রতার প্রতি সংবেদনশীল, যা বাংলাদেশের আর্দ্র আবহাওয়ায় ব্যবহার করা কঠিন। মান বজায় রাখা, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উৎপাদন ব্যয় কমানোও বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া “প্যাকেট খাওয়া” নিয়ে মানুষের সাংস্কৃতিক দ্বিধাও কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।
তারপরও, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করেছে বলে খাদ্যযোগ্য প্যাকেজিং একটি সম্ভাবনাময় ও টেকসই বিকল্প। প্রযুক্তিটি সঠিকভাবে বিকশিত হলে এটি প্লাস্টিক দূষণ কমাবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করবে এবং সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হ্রাস করবে—সবটাই প্যাকেটটিকে খেয়ে ফেলার মাধ্যমে!
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে