Views Bangladesh Logo

ভোট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধনে ইসির আরও সচেতনতা জরুরি

গামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সম্প্রতি ইসি ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা-২০২৫’ প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন পর্যবেক্ষক’ হিসেবে ‘পর্যবেক্ষক সংস্থা’র নিবন্ধন পেতে হলে ১৯৭২-এর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী বেশ কিছু জরুরি নীতিমালা স্পষ্টতই অনুসরণ করতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে- সংস্থার নিবন্ধিত অফিসের নাম ঠিকানা। অথচ গত ৩০ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নামেই কেবল পর্যবেক্ষক সংস্থা, নেই কোনো অফিস, এমন কি কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাসভবনকে, কোনো ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ঘরকে এবং কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনকে অফিস দেখিয়ে পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করা হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে পর্যবেক্ষক সংস্থা নিবন্ধনের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারির পরিপ্রেক্ষিতে ৩১৮টি প্রতিষ্ঠান নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করতে আবেদন করেছিল, এর মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ৭৩টি প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসি। পত্রিকায় প্রকাশিত ইসির গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এসব সংস্থা নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকলে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে (২০ অক্টোবর ২০২৫) লিখিতভাবে জানাতে হবে।

এর মধ্যে সংবাদমাধ্যমের সরেজমিন তদন্তে উঠে এসেছে, প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাগই ছোট ও সক্ষমতাহীন। কোনো ক্ষেত্রে নিজের বাসভবনকে, কোনো ক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ঘরকে এবং কোনো ক্ষেত্রে নির্মাণাধীন ভবনকে অফিস দেখিয়ে পর্যবেক্ষক হতে আবেদন করা হয়েছে। ইসির বাছাইকৃত ৭৩টি নিবন্ধনযোগ্য সংস্থার ৪৩টি সংস্থা অনুসন্ধান করে দেখা গেছে এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানের উল্লিখিত ঠিকানায় গিয়ে কার্যালয় পাওয়া যায়নি। ৬টি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী নিজের বাসভবনকে অথবা একটি কক্ষকে ঠিকানা হিসেবে দেখিয়েছেন। ৫০ জন বা তার বেশি কর্মী পাওয়া গেছে মাত্র ৬টি প্রতিষ্ঠানে। অনেক ক্ষেত্রে এক কক্ষ, দুই কক্ষ নিয়ে ছোট কার্যালয় করে প্রতিষ্ঠান কোনো রকমে চলছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে গুটিকয়ের।

প্রশ্ন হলো, ইসির বাছাইয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ল না কেন? ইসি তাহলে কী যাচাই-বাছাই করল? রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা আছে এমনও প্রতিষ্ঠানের নাম পর্যবেক্ষক সংস্থা হিসেবে উঠে এসেছে। এটা কী করে হলো? নির্বাচনবিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আবদুল আলীম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের এই তালিকা প্রাথমিক। হয়তো শুনানিতে কেউ কেউ বাদ পড়বে। নতুন করে আবেদনের পর কেউ কেউ যুক্তও হতে পারে।

সেটা হলেও এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, শুরুতেই একটু গলদ হয়ে গেল। আবদুল আলীম আরও বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে সংস্থার অভিজ্ঞতা নাও থাকতে পারে, দেখতে হবে তাদের সক্ষমতা আছে কি না। কথা হলো, অভিজ্ঞতা না থাকলে সক্ষমতা কী করে থাকে? আর শুরুতেই যারা অনিয়মের আশ্রয় নেয় তারা পরবর্তীতে কী করবে? আমরা চাই পর্যবেক্ষ সংস্থা নিয়ে ইসি আরও সচেতন হোক। আরও গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই-বাছাই কার্য সম্পন্ন করে তাদের নিবন্ধন দেয়া হোক।

যদি কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থার গাফিলতিতে কোনো বদনাম হয় তার বদনামের ভাগীদার ইসিও হবে। ভোট পর্যবেক্ষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। এর মাধ্যমে শুধু ভোটের দিনের পরিবেশই নয়, বরং পুরো নির্বাচনকে ঘিরে গণতান্ত্রিক মানদণ্ড রক্ষার চিত্র ফুটে ওঠে। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই এ ব্যাপারে কোনোরকম অবহেলা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ