ডাকসুর নির্বাচনি ফল: যা ভাবছেন অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা
দীর্ঘ ৬ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ‘মিনি পার্লামেন্ট’ খ্যাত এই নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ভূমিধস বিজয় অর্জন করেছে। ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে অনুষ্ঠিত ভোটে ২৮ পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয়ী হয়েছেন শিবিরপন্থি প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ভোট কারচুপির অভিযোগ যেমন উঠছে তেমনি কেউ কেউ ফলাফলকে ‘শিক্ষার্থীদের রায়ের প্রতিফলন’ হিসেবেও দেখছেন।
নির্বাচনের ফলাফল ও প্রেক্ষাপট
১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্ররাজনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৯০-এর পর থেকে ডাকসু নির্বাচন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৯ সালে একবার নির্বাচন হলেও তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। এরপর ৬ বছর বিরতির পর ২০২৫ সালের এ নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল ব্যাপক আগ্রহ।
তবে এবারের ফলাফল অতীতের চিত্র থেকে আলাদা। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলো বরাবরই ডাকসুতে প্রভাবশালী ছিল। এবার শিবিরপন্থিদের অভাবনীয় জয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিস্মিত, আবার অনেকে এটাকে ছাত্ররাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।
যা বলছেন ঢাবির বাহিরের শিক্ষার্থীরা
ধানমন্ডি ল’ কলেজের শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ নির্বাচনি ফলাফলকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। তার ভাষায়, ‘এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাওয়ার প্রতিফলন ঘটেছে। এ ফলাফল সবাইকেই মেনে নেয়া উচিত। গণতন্ত্র মানে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা। যদি কোনো পক্ষ হেরে যায়, সেটি জনগণের ম্যান্ডেট অস্বীকারের কারণ হতে পারে না।’
তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী নবীন রহমান নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং পাকিস্তানের প্রভাবের আশঙ্কা করেছেন। তিনি দাবি করেন, ‘ডাকসুর ইলেকশন কমিশন থেকে ফলাফল ঘোষণার আগেই পাকিস্তানের কয়েকটি গণমাধ্যম শিবির নেতাদের নাম প্রকাশ করেছে।’ নবীন প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কীভাবে তারা (পাকিস্তানি গণমাধ্যম) আগে থেকে ফল জানলো? এটা কি পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ প্রভাব নয়?’
বঙ্গবন্ধু কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. জোবায়ের আলম সৈকত এ নির্বাচনি প্রক্রিয়াকে ইতিহাসের অযোগ্য নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সব প্রস্তুতি শেষ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করত তাহলে কেন ছাত্রদল ২৮টি পদের একটিতেও জিততে পারল না? এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো ষড়যন্ত্র আছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘এ নির্বাচন ১০২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে অযোগ্য নির্বাচন।’
একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক নির্বাচনি ফলাফলকে নতুন ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন। তার ভাষায়, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের ছাত্ররাজনীতিতে ধর্মীয় রাজনীতি নতুন মোড়কে উগ্রবাদী গোষ্ঠীর আস্ফালন ঘটিয়েছে। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের অসহায়ত্ব প্রমাণ করেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিগুলো যদি ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে না তোলে, তবে জাতির ভবিষ্যৎ অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান বিজয়কে কারচুপি হিসেবে না দেখে সাংগঠনিক শক্তির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘যে কোনো নির্বাচনে পরাজিতরা অভিযোগ তো তুলবেই; কিন্তু নির্বাচনে শিবিরের বিজয় মানে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির প্রতিফলন। এটাকে শুধু কারচুপি বলে উড়িয়ে দেয়া সঠিক নয়।’
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম ঢাবি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, ‘ঢাবি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে। নির্বাচনে যখন ছাত্রদল একটি পদেও জিততে পারে না তখন এটাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। এর মাধ্যমে মূলত প্রশাসনের নির্দিষ্ট একটি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে