Views Bangladesh Logo

আর্থিক ক্ষমতা ৩০ কোটি ঢাবি উপাচার্যের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খানের আর্থিক অনুমোদনের সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্ধারিত রয়েছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জনে প্রশাসনিক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি তিনি।

গত সোমবার (১৯ মে) ঢাবির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাবেদ আলম মৃধা ভিউজ বাংলাদেশকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার ৮৪১ কোটি ৮৬ লাখ টাকার মহাপরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত সব বড় নির্মাণ প্রকল্পই এই সীমা অতিক্রম করে এবং সেগুলোর অনুমোদনে প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষরের প্রয়োজন হয়।

‘মজার বিষয় হলো, উপাচার্যের মহাপরিকল্পনার অধীনে থাকা বিল্ডিংগুলোর অনুমোদনের ক্ষমতাও তার নেই। প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় ১০০ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় এগুলো প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন সাপেক্ষ’- বলেন জাবেদ মৃধা।

তিনি আরও বলেন, তবে এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও উপাচার্য ড. নিয়াজ খান গত ছয় মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা উন্নয়ন কাজগুলোর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। গত ছয় বছরে যা হয়নি, তিনি মাত্র ছয় মাসে তা করে দেখিয়েছেন।’

মহাপরিকল্পনায় মোট ৩১টি ভবনের কাজ অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে ৯টি আবাসিক হল, ছয়টি একাডেমিক ভবন, ৯টি লবি এবং কেন্দ্রীয় মসজিদ ও ডাকসু ভবনসহ অন্য অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন। সম্পূর্ণ মহাপরিকল্পনাটি একনেক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনুমোদন পেলে জুলাই মাস থেকে বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে। এ লক্ষ্যে ভূমিকম্প, বন্যা ও পরিবেশগত ঝুঁকি, পুনর্বাসন, আবাসন-সংক্রান্ত চাহিদা বিশ্লেষণসহ বিস্তারিত মূল্যায়ন সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রি-একনেক পর্যায়ে ২৯টি পরিকল্পনা-সংক্রান্ত মন্তব্যের জবাব দেয়া হয়েছে বলেও জানান প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাবেদ আলম মৃধা। তিনি আরও বলেন, অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের গতিশীল নেতৃত্ব জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়া মোকাবিলায় সহায়ক হয়েছে। যেখানেই তাকে যেতে বলা হয়েছে, তিনি গিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের ক্ষতির দায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ওপর চাপিয়ে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘উপাচার্য অত্যন্ত শিক্ষার্থীবান্ধব।’

এখন পর্যন্ত ওপেক অনুমোদিত পাঁচটি প্রকল্প রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, ফার্মাসিউটিক্যাল গবেষণা এবং সলিমুল্লাহ মুসলিম হলকে হেরিটেজ সাইটে রূপান্তরের উদ্যোগ।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের বৈষম্য ও ঘনবসতির সমস্যা দেখা যাচ্ছে। নতুন প্রকল্পগুলো পুরুষ শিক্ষার্থীদের আবাসনের সমস্যা দূর করলেও নারী শিক্ষার্থীদের সমস্যা থেকে যাবে, কারণ পর্যাপ্ত জমির অভাব রয়েছে। কবি সুফিয়া কামাল হলে বর্তমানে প্রতি একরে ৯২০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন, যেখানে নিয়ম অনুসারে সর্বোচ্চ ৩৫০ জনের থাকার কথা।

জাবেদ আলম মৃধা আরও বলেন, ‘ঢাবির নারী শিক্ষার্থীদের ৭৪ শতাংশই গ্রাম থেকে আসে এবং প্রায় ৭০ শতাংশই নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের। তারা ক্যাম্পাসের বাইরে আবাসন নিতে পারে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মের বাইরে যেতে পারে না।’

এই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর মতে, ঢাবি উপাচার্যের অবকাঠামো উন্নয়নে অসাধারণ অঙ্গীকার দেখালেও তার ৩০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষমতা প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতার দিকটি তুলে ধরে। বিশাল উন্নয়ন পরিকল্পনার কার্যকর বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় চালিয়ে যেতে হবে। না হলে সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন বিশেষ করে বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষার্থী জনগোষ্ঠীর আবাসন চাহিদা মেটানো জটিল হয়ে উঠতে পারে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ