Views Bangladesh Logo

বনের পথে পাহাড়ি ঢাল বেয়ে নামা

২০২৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পেলেন হাঙ্গেরির লাসলো ক্রাসনাহোরকাই (László Krasznahorkai)। ১৯৫৪ সালের ৫ জানুয়ারি হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলাতে তার জন্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়লেও শেষ পর্যন্ত সাহিত্যেই স্থায়ী আশ্রয় নেন। তার জীবনযাপন নিভৃত ও সংযত- তিনি প্রায়ই হাঙ্গেরির পাহাড়ি অঞ্চলে একাকী সময় কাটান, লেখেন, ভ্রমণ করেন, আর চীনা ও জাপানি সংস্কৃতির দর্শন নিয়ে চিন্তা করেন।

তিনি ২০১৫ সালে ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পেয়েছিলেন আর এখন ২০২৫ সালে নোবেল পুরস্কার জয় তার দীর্ঘ সাহিত্যিক সাধনার স্বীকৃতি। তার লেখাকে অনেকেই ফ্রান্জ কাফকা, স্যামুয়েল বেকেট বা গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ধারাবাহিকতায় রাখেন, যদিও তিনি নিজে কাউকেই অনুসরণ করেন না- বরং ভাষাকে এক অস্তিত্ববাদী সংগ্রামের মঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করেন। আজকের বিশ্বসাহিত্যে লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এক অনন্য কণ্ঠ- যিনি আমাদের মনে করিয়ে দেন, ভাষা কেবল প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং তা মানব আত্মার গভীরতম প্রতিধ্বনি।

ভিউজ বাংলাদেশের পাঠকদের উদ্দেশ্যে লাসলো ক্রাসনাহোরকাইর ‘A Mountain to the North, a Lake to the South, Paths to the West, a River to the East’ গল্পগ্রন্থ থেকে একটি গল্প ‘Downhill on a Forest Road’ প্রকাশ করা হলো। গল্পটি হাঙ্গেরীয় ভাষা থেকে জর্জ সারতেজের ইংরেজি অনুবাদকে অনুসরণ করা হয়েছে। ইংরেজি থেকে বাংলায় ভাষান্তর করেছেন রথো রাফি


প্রথমবারের মতো ইগনিশনের চাবিটা নিয়ে সমস্যায় পড়ল সে আর স্বাভাবিকভাবেই চাবিটাকে আরও চাপতে লাগল শুধু এ কারণে যে চাপাচাপি ছাড়া তার আর কোনো উপায় নেই, তারপরই সে ইঞ্জিনটাকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হলো আর মোড় নিল পাহাড়ি পথের দিকে, চাবি নিয়ে যত সমস্যা সব ভুলে গেল, যদিও এই আকস্মিক কৌশল নেয়ার পরও সে ভাবছিল আসলেই সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা, কারণ সর্বোপরি ইগনিশনের চাবিটার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়, বিশেষ করে এমন নতুন একটি গাড়ির ক্ষেত্রে তো নয়ই, তবে এসব চিন্তাও উবে গেল, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই, অবশিষ্ট রইল না আর এ চিন্তার এক কণাও, সে মনোযোগ দিল সেকেন্ড গিয়ারে গাড়ি চালানোতে তা চলল থার্ড গিয়ারে যাওয়ার আগপর্যন্ত, তারপর আবার গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া মহাসড়কটা ধরে চলতে লাগল, মহাসড়কটি তখনো জনশূন্য, কারণ তখন সাড়ে আটটা বাজে, পর্যটকদের জন্য বের হওয়ার পক্ষে খুব বেশি সকাল, আর স্থানীয়দের বের হওয়ার ক্ষেত্রে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, সঠিক সময়টা সে জানত না তা নয়, কারণ যখন সে গাড়ির ঘড়িটার দিকে খেয়াল করে, তখন ৯টা বাজতে ৮ মিনিট বাকি আর সে ভাবলো, ওহ, চলতে শুরু করাই বরং ভালো, আর সে হালকা চাপ দিল অ্যাকসিলেটারে, তার দুই পাশের গাছের শাখাগুলো নিবিড় হয়ে আঁকাবাঁকা পথটার ওপর চাঁদোয়ায় রূপ নিয়েছে।

শাখা-প্রশাখা ভেদ করে আলোর রশ্মি নিচে পড়ায় পুরো দৃশ্যটা খুব সুন্দর হয়ে উঠেছে, সড়কটার ওপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আলো, সবকিছুই কেমন কাঁপছে, আর পেছনে পুরো মহাসড়কটা; বেশ অপূর্ব, সে ভাবলো, আর সবুজ ঘাস ও গাছপালার গন্ধ সে বেশ অনুভব করতে পারছিল, এগুলো তখনো শিশিরসিক্ত, এবার পথটার একবারে সোজা অংশের সামনে এসে পড়ায়, সামনের দিকে সোজা তিনশ মিটার নিচ পর্যন্ত চলে গেছে, যেখানে গাড়িটার গতি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়, আর সে ভাবল এবার একটু গান শোনা মন্দ হয় না আর কার রেডিওটার দিকে হাত বাড়ায়, তখনই আচমকা দেখতে পায়, তার সামনে থেকে শ’ খানেক কিংবা শ’ দেড়েক মিটার দূরে, বলতে গেলে, সোজা পথটার মাঝখানে কিংবা তার দুই-তৃতীয়াংশ পার হয়ে নিচে পথের ওপর এক টুকরো জমিন যা তার ভ্রু কুচকে দেয় এবং তার ভাবনাকেও করে তোলে কুটিল, সে ভাবার চেষ্টা করে কী হতে পারে- কাপড়ের বাতিল কোনো টুকরো, মেশিনের কোনো অংশ কিংবা আর কী হতে পারে?- তার মনের মধ্যে বেশ ঝলক দিয়ে উঠল যে, এটা দেখতে প্রাণীর মতো যেন, যদিও ন্যাকড়ার কানি হতে পারে, কোথাও থেকে ছুড়ে ফেলা কিংবা কোনো ট্রাক থেকে পড়ে যাওয়া কিছু, একটা ন্যাকড়া যা অদ্ভুতভাবে জট পাকিয়ে রয়েছে; কিন্তু যখনই সে দেখল, পথের মাঝখানে যেমন, পথের পাশেও কিছু একটা পড়ে রয়েছে, সে- স্টিয়ারিং হুইলের সামনে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করল, আর চেষ্টা করল ওটার দিকে আরও ভালোভাবে তাকানোর; কিন্তু সে ঠিকঠাক দেখতে পেল না সেখানে একটা কাঠামো স্থির হয়ে রয়েছে এবং অপর কাঠামোটা শুরু করেছে চলতে, তাই গতি কমিয়ে আনল সে, কারণ, যদি সেখানে দুটি কাঠামো অবস্থান নেয়, তাহলে তাদের কারো ওপর দিয়ে সে গাড়ি চালিয়ে নিতে চায় না, যখন খুব কাছে চলে এলো, তাদের চিনতে পারল, আর সে এতটাই হতবাক হয়ে পড়ল যে, নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তার, ব্র্যাকে পা চাপল সে, যেহেতু জিনিটাকে কোনো প্রাণীর মতোই দেখাচ্ছিল না, এটা তো একটা, একটা কুকুর ছানা, একটা পাপি, সড়কের মাঝখানের সাদা দাগটার ওপর একেবারেই চুপচাপ বসে আছে, একটা হালকাপাতলা প্রাণী, তালি দেয়া একটা কোট গায়ে, আর একটা নিষ্পাপ দৃষ্টি রাস্তাটার মাঝখান থেকে গাড়ির মধ্যে তাকে দেখছে, বেশ শান্ত হয়ে নিজের পাছায় ভর দিয়ে বসে রয়েছে, পিঠটা একদম সোজা করে রাখা, আর যে বিষয়টা সবচেয়ে বেশি পিলে চমকানোর মতো তা হলো তার চোখের মধ্যে তাকানোর ভঙ্গিটা, ভঙ্গিটা- সে যেন নড়বে না সেখান থেকে, বিশাল গাড়িটা সত্ত্বেও সে সেখানে বসেই রয়েছে যার কারণ বোঝা মুশকিল, বাস্তবে গাড়িটাকে ঠিক গায়ের ওপরে উঠে আসতে দেখেও সেখানে ওটা ছাইপাশ যা-ই করুক না কেন, ওই কারণেই আপনি দেখতে পেলেন এর নড়ার কোনো লক্ষণ নেই এমনকি সে কিংবা তার বড় গাড়িটা যদি তার ওপর উঠেও যায়, কারণ এই কুকুরটা গাড়ি নিয়েই মাথা ঘামাচ্ছে না, কিংবা গাড়ির নৈকট্য যদিও তার গায়ে এসে- স্পর্শ করল বলে, তবুও তা নিয়ে আগ্রহই নেই তার; আর কেবল তখনই সে খেয়াল করল কুকুরটা রাস্তার মাঝখানে সাদা রেখার ওপর যেখানে বসে আছে তার বামে পথের পাশেই আরেকটা কুকুর, তার চ্যাপ্টা শবদেহটা, মনে হচ্ছে গাড়ির চাপা খেয়ে, একেবারে চিরে খুলে গেছে, আর যদিও তার নিজের গাড়িটা তাদের কাছে পৌঁছে গেছে, মৃত কুকুরটার সঙ্গীর কাছে চলে এসেছে- তাদের মধ্যে কী সম্পর্ক?- এক ইঞ্চিও নড়লো না, তাই সে এর আশপাশ দিয়ে জোর করে এগোনোর চেষ্টা করল, খুব ধীরে, এর ডান পাশ দিয়ে, তার ডান চাকাটা রাস্তাটার বাইরে রাখল, যেন সে পাশ দিয়ে যেতে পারে, কয়েক সেন্টিমিটার দূর দিয়ে শুধু কোনো একভাবে এটাকে এড়িয়ে যাওয়া, এমন যদি হয়, কুকুরটা পিঠ সোজা করে সেখানেই বসে থাকে, আর সে এখন এর চেহারার দিকে সরাসরি তাকাতে পারছে, যদিও সেটাই হয়তো ভালো যে, যদি তার তাকাতে না হয়, কারণ, একে সতর্কভাবে পার হয়ে যাওয়ায়, কুকুরটা দূরে থেকে তার চোখ দিয়ে তাকে অনুসরণ করতে লাগল, তার বিষাদভরা চোখ দুটি দিয়ে, যে চোখ দুটিতে যন্ত্রণা বা ভয়ের কিংবা বুনো ক্রোধের কিংবা এই আঘাতে আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়ার কোনো ছাপ নেই, চোখ দুটির দৃষ্টি এক কথায় বোঝার অতীত, আর বিষাদ, আশপাশে নড়াচড়া করা গাড়িটার চালকের দিকে বিষাদের দৃষ্টিতে তাকিয়ে, আর তার কাছে থেকে দূরে, বনের পথের মাঝখানে সাদা দাগটার ওপর থেকে তখনো নড়ছে না এবং এটা কোনো ব্যাপারই নয়, হোক তা লস এঞ্জেলস থেকে পনের মাইল দূরে, কিয়োটো থেকে আঠারো মাইল, কিংবা বুদাপেস্টের উত্তর এলাকা থেকে বিশ মাইল, বলার কথা শুধু, এটা সেখানেই বসে রয়েছে, বিষাদভরা চোখে, তার সঙ্গীকে দেখছে, পাহারা দিচ্ছে, অপেক্ষায় বসে রয়েছে- কেউ একজন আসবে, যার কাছে বুঝিয়ে বলা যাবে কী ঘটেছে, কিংবা শুধু বসেই রয়েছে এবং আর-কারো জন্য অপেক্ষা করছে এ আশায় যে শেষপর্যন্ত সে হয়তো জেগে উঠবে এবং তারা দুজন মিলে চলতে শুরু করবে যেন তাদের জোড়াটা বোধের অতীত এই জায়গাটা থেকে অদশ্য হয়ে যাবে।

তাদের মাত্র দুয়েক মিটার পার হয়ে গেল সে আর তখনই থামতে চাইল, এ কথা ভেবে যে, আমি তাদের এখানে ফেলে যেতে পারি না, শুধু কোনো এক কারণে তার পা দুটো নড়তে চাইছিল না, তারা যা করতে চাইছে তা করা, আর গাড়িটা যখন এগিয়ে যাচ্ছে, আয়নার মধ্য দিয়ে তাদের সে দেখছে, মৃতটা এর পাশে আধাশোয়া হয়ে পড়ে রয়েছে, তার ভেতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছড়িয়ে আছে রাস্তাটার ওপর, তার পা চারটি বিশ্রীভাবে একেবারে সমান্তরাল হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে; কিন্তু সে কেবল পাপিটার পেছনটাই দেখতে পাচ্ছিল, নাজুক কিন্তু দেয়াল ছিদ্র করার যন্ত্রের মতো মতোই সোজা, তখনো রাস্তাটার মাঝখানে বসা, যেন সে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এভাবেই বসে থাকবে, আর সে দুশ্চিন্তায় পড়লো ভেবে যে, এটাও গাড়ির ধাক্কা খাবে, আর আমার উচিত থামা, সে নিজেকেই নিজে বলল; কিন্তু গাড়িটা চালিয়ে নেয়া অব্যাহত রাখল সে, যেহেতু তখন ৯টা বেজে দুই মিনিট পার হয়ে গেছে, সে যখন তার ঘড়ির দিকে এক পলক তাকালো তখনই তা দেখতে পেল, কী করা উচিত, আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে, সে দুশ্চিন্তার মাঝে পড়ল, তার পা দুটি এরই মধ্যে অ্যাকসিলেটরের ওপর চাপ দিয়ে ফেলেছে, দুই মিনিটের মধ্যেই আমি শহরে পৌঁছে যাব, তারপর এক বাঁক থেকে আরেকটি বাঁক পার হয়ে, আর এরই মধ্যে রাস্তাটার আঁকাবাঁকা অংশটা পার হয়ে গেছে সে আর তখন ৯টা পার হয়ে এক মিনিট, যখন সে তার ঘড়িটায় লক্ষ করেছিল, তার পা বেশ শক্তভাবে অ্যাকসিলেটরকে নিচের দিকে চাপ দিল, তখন এক মুহূর্তের জন্য, সে কুকুরটার কথা ভাবলো আবার, যেভাবে সে তার সঙ্গীটাকে লক্ষ করছিল; কিন্তু দৃশ্যটা দ্রুতই মিলিয়ে গেল এবং পরবর্তী মিনিটের জন্য সে গাড়ি চালানোর ওপরই পূর্ণ মনোযোগ দিল, গতি বাড়াতে বাড়াতে একেবারে ষাটের কাছে নিয়ে এলো যেহেতু রাস্তাটার ওপর তখন আর কেউ ছিল না, শুধু ধীরে চলা একটা গাড়ি ছাড়া, ওটা একটা স্কুডা, সে যখন গাড়িটার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল সে ভাবল, সে একটু উদ্বিগ্ন হলো যেহেতু এর পাশে গিয়ে গতি কমাতে হলো, একে ওভারটেক করার পরিবর্তে, সামনের দিকে এগোতে এগোতে ওভারটেকিংয়ের সুযোগ শেষ হয়ে গেল; কিন্তু আমি অপেক্ষা করব না, সে বারবার এ কথাটাই ভাবল, না, প্রাচীন স্কুডার পেছনের থাকার কারণে নয়, রাস্তাটার বাঁকটার জন্যও নয়, আর কারণ সে পথটাকেও ভালো করেই চেনে, এ পথে হাজারবার সে গাড়ি চালিয়ে নেমে এসেছে, আর সে বেশ ভালোই বুঝতে পারে, এটাকে ওভারটেক করার কোনো সুযোগ পাওয়া যাবে না, যতক্ষণ না শহর শুরুর সাইনটার কাছে পৌঁছানো যাবে, সে তার পা ঠিক নিচে নামালো যেন সে এটাকে পার হয়ে যাবে সামনের বাঁকটা আসার আগেই, যখন স্কুডাটা তার সামনে ডানেবামে করতে লাগল, সবকিছুই যেন এক পলকে ঘটল, সে যে পার হয়ে যেতে চাচ্ছে এ সংকেতটা দিতেই তার আয়নার দিকে তাকাল, স্টিয়ারিং হুইলকে বামদিকে ঘুরালো, সে পাশের লেনটাতে গিয়ে ঢুকল, আর ওভারটেক করতে শুরু করল, তখন অপর লোকটা, তার আয়নার দিকে তাকাতে না পারায়, সেও বাম দিকেই বাঁক নিল, কারণ সে বাঁক নিতে চেয়েছিল, কিংবা ঘুরে ঠিক ডান দিকেই আসতে চেয়েছিল, আসলে কী চেয়েছিল কে জানে, আর হয়তো তার বামপাশের ইনডিকেটররা জ্বলা-নিভা শুরু করেছিল; কিন্তু ঠিক সেই সময়েই, যখন সে বাম দিকে ঘুরলো; কিন্তু ততক্ষণে অবশ্যই অনেক দেরি হয়ে গেছে, আর ব্র্যাক চেপে তার কোনো লাভ হলো না, কারণ স্কুডাটা, খুব ধীরগতির হওয়ার কারণে, বাস্তবে গাড়িটা রাস্তার ওপর সিদ্ধান্তহীন হয়ে এদিকে ওদিক করে বেড়াচ্ছিল, এর দৃশ্যটা যেন জমাট বেঁধে গেছে, এটা না পারছে এড়িয়ে যেতে, না পারছে ভাঙতে, আর অন্য কথায়, ওটাকে থামানোর কোনো উপায় জানা ছিল না তার, সে তাকে ধাক্কাই দিয়ে বসল।

সবকিছুই ভেঙে পড়ছে অন্ধকারে আর শেষ তার আকস্মিক মৃত্যুতে এমন কোনো ইঙ্গিত দিয়ে আসেনি বিপর্যয়ের এই ধাক্কাটা; সবকিছুরই, বিপর্যয়েরও, মুহূর্তের-পর-মুহূর্তের ধারাবাহিক একটা কাঠামো আছে, হিসেব নিকেশের বা ধারণা করার একেবারে বাইরে থাকে এই কাঠামেটা, অর্থাৎ পাগল করার মতো জটিল কিংবা একে অনুভব করতে হয় একেবারেই অন্যকোনো উপায়ে, এটা এমন কাঠামো যেখানে এর জটিলতার মাত্রাটা পরিমাপ করা যায় কেবল দৃশ্যের অনুষঙ্গে, যাদের বশ মানানো অসম্ভব যেহেতু ওই বিন্দুতে এসে সময় ধীর হয়ে পড়ে, যে বিন্দুতে জগৎটা পরিস্থিতির প্রতি হয়ে পড়ে খুব নির্বিকার, একটা নিখুঁত বৈশ্বিক উপসংহারের মধ্যে এসে দাঁড়ায় বিবিধ পূর্বশর্ত, তাই ঘটে কারণ তারা অভিপ্রায়-নির্মিত, কারণ মুহূর্তটা অবচেতন ইচ্ছের ফল, কারণ একটা চাবি যেটা কিনা ইগনিশনের কাজটা করতে পারছিল না, কারণ আমরা থার্ড গিয়ারে স্টার্ট করিনি, তারপর দ্বিতীয় গিয়ারে নেমে আসিনি; কিন্তু কারণ আমরা দ্বিতীয় গিয়ারে শুরু করেছিলাম এবং যখন আমরা পাহাড় বেয়ে নামতে শুরু করেছিলাম তখন তিন নম্বর গিয়ারে উঠে এসেছিলাম, তারপর গ্রামটার ওপরের মহাসড়কটায় উঠে এসেছিলাম, কারণ আমাদের সামনে যে-দূরত্বটা তা ছিল সুড়ঙ্গের নিচে তাকানোর মতো, কারণ ডালপালায় যে সবুজ পত্রনিবিড়তা তখনো তা শিশির-গন্ধ-মাখা, কারণ একটা কুকুরের মৃত্যু আর কেউ একজন বাম দিকে ঘুরতে গিয়ে সে মুহূর্তে ঠিকঠাক কৌশল খাটাতে পারেনি, বলতেই হয়, কারণ একজন কিংবা অন্যজনের ভুল নির্বাচন, আরও বেশি ভুল কৌশল গ্রহণ, আর তখনো আরও বেশি করে ভুল কৌশল গ্রহণ, অনন্তসংখ্যক ভুল নির্বাচন চালিয়ে যাওয়া, ওইসব উন্মাদনাকারী ‘আমরা-যদি-আসলেই-জানতাম’ ধরনের নির্বাচন যাদের ধারণা করা অসম্ভব কারণ যে পরিস্থিতির মধ্যে আমরা নিজেদের দেখতে পাই তা জটিল, আর এমন কিছুর দ্বারা নির্ধারিত যা আসলে ঈশ্বর কিংবা ইবলিশের চরিত্রে নিহিত থাকে না, যাদের কৌশলগুলো আমাদের বোধগম্য নয় আর এমন থাকাই তার নিয়তি কারণ কোনো কিছু বেছে নেয়ার ইচ্ছে আসলেই বেছে নেয়ারই বিষয় নয়, তার পরিণামে তা ঘটে যায় কোনো একভাবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ