Views Bangladesh Logo

আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বদলাতে চাপ দেয়া হয়: ডা. রাজিবুল

ত বছরের কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত প্রথম ছাত্র আবু সাঈদের ময়না তদন্তকারী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ডা. রাজিবুল ইসলাম দাবি করেছেন, তদন্তের ফলাফল বদলাতে তাকে চাপ দেয়া হয়েছিল। কারণ, প্রতিবেদনে আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নয়, বরং মাথার আঘাতে মারা গেছেন বলে দেখানো হোক বলে চেয়েছিল কর্তৃপক্ষ।

চব্বিশের গণআন্দোলনে নিহত আবু সাঈদের সঠিক পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেয়ার কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন এই চিকিৎসক।

রংপুর মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. রাজিব রোববার (২৪ আগস্ট) শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাক্ষ্য দেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সপ্তম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণকালে মামলাটির ১৮তম সাক্ষী ছিলেন তিনি।

চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার চলা মামলাটির অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

তবে অভিযোগের দায় স্বীকার করে মামলাটিতে রাজসাক্ষী হয়েছেন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকা মামুন। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও কামাল ভারতে থাকায় তাদেরকে পলাতক দেখিয়ে বিচার চলছে মামলাটির।

সাক্ষ্যে ডা. রাজিব বলেন, প্রাথমিকভাবে আবু সাঈদের শরীরে একাধিক গুলি রেকর্ড এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে গুলিতে হত্যার কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে, তদন্তকারীদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর তাকে একাধিকবার এটি পুনর্লিখন করতে বলা হয়েছিল।

তার দাবি, রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ, পুলিশ কর্মকর্তা এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে প্রতিবেদন পরিবর্তনে চাপ দিয়েছিলেন। এটি করতে প্রণোদনা হিসেবে সিঙ্গাপুর বা থাইল্যান্ডে বিদেশ ভ্রমণের প্রলোভন দিয়েছিলেন তারা। রাজি না হলে দেয়া হয় আইনি পদক্ষেপের হুমকিও।

‘কর্তৃপক্ষ চেয়েছিল, প্রতিবেদনে বলা হোক, আবু সাঈদ গুলিবিদ্ধ হয়ে নয়, বরং মাথায় আঘাতে মারা গেছেন। কিন্তু জনসাধারণের জ্ঞান এবং প্রমাণের উদ্ধৃতি দিয়ে আমি তা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাই’- বলেন ডা. রাজিবুল।

তিনি জানান, বারবার প্রত্যাখ্যানের পর তিনি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন, যেখানে সরাসরি গুলিবিদ্ধের উল্লেখ বাদ দেয়া হলেও পরে গুলিতে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে।

আল জাজিরাকে দেয়া ভিডিও সাক্ষাৎকারও শেয়ার করেন ডা. রাজিবুল, যেটি সাক্ষ্য গ্রহণকালে ট্রাইব্যুনালে প্রচারিত হয়।

ডা. রাজিবুল বলেন, ‘গত বছরের ১৬ জুলাই আমি শহীদ আবু সাঈদের ময়না তদন্ত করি। আবু সাঈদের শরীরে অনেকগুলো বুলেট পাওয়া যায়। বুলেট বিদ্ধ হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ করি।তবে মতামতসহ আমার করা রিপোর্ট তাজহাট থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিতে গেলে সেটি গ্রহণ না করে নতুন করে রিপোর্ট লিখতে বলেন। এভাবে তিনবার আমার রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়নি’।

তিনি জানান, গত বছরের ৩০ জুলাই তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহফুজুর রহমানের কক্ষে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে মাহফুজুর রহমানসহ সিটি এসবির পুলিশ সুপার সিদ্দিক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মারুফ এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রংপুর মেডিকেল কলেজ শাখার সভাপতি চন্দনও ছিলেন। ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের অন্য কর্মকর্তারা বাইরে অবস্থান করছিলেন।

‘তারা তাদের ইচ্ছেমতো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিতে চাপ দেন। তাদের ইচ্ছেমতো প্রতিবেদন না দিলে ব্যবস্থা নেয়াসহ তার বিরুদ্ধে মামলা করার ভয়-ভীতি দেখান’- দাবি ডা. রাজিবুলের। বুলেটের আঘাতের পরিবর্তে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে তাকে উল্লেখ করতে বলা হয়েছিল বলেও জানান এই চিকিৎসক।

রাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, উপাধ্যক্ষের কক্ষে তাকে জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা প্রতিবেদন আছে। তাই তাদের ইচ্ছেমতো ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দিলে তাকে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ভ্রমণের প্রলোভন দেখানো হয়। তার পাসপোর্ট নেই জানালে দুই সপ্তাহের জন্য তাকে কক্সবাজার ঘুরে আসতে বলা হয়।

সাক্ষ্য দেয়ার পর ডা. রাজিবুলকে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন যায়েদ বিন আমজাদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এস এইচ তামিম।

শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে ১০ জুলাই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলার বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ পর্যন্ত মামলাটিতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৯ জন সাক্ষী।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ