Views Bangladesh Logo

ঢাবি ভাসমান হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ নয়

ভাসমান হকারদের ভিড় শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারা ঢাকা শহরের জন্যই এক করুণ নিয়তি। গ্রামাঞ্চলে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই বলে অসহায় মানুষগুলো রাজধানীতে এসে ভিড় করেন। যে যা পারেন তাই করে টিকে থাকার চেষ্টা করেন। সহজ পন্থা, কোনো ছোটখাটো ব্যবসা, যাকে আমরা ভাসমান হকার বলেই চিহ্নিত করে থাকি।

গত কয়েক বছর ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ এলাকায় ভাসমান হকারদের ভিড় বাড়ছে চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি চত্বরটিকে আর বোঝার উপায় নেই যে এটি কি বিশ্ববিদ্যালয় না খাদ্য-চত্বর! শত শত হকার। মুড়ি-চানাচুর, হরেকরকম ভর্তা, চটপটি, ডাব, সিগারেটওয়ালা এমন কোনো ভাসমান হকারের কমতি নেই সেখানে। এতে ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হয় হাতের কাছে যা চায় পেয়ে যায়; কিন্তু ভাসমান হকারদের কারণে যেমন ভিড় বাড়ে, তেমনি আশপাশের পরিবেশও নোংরা হয়।

এদিকে ঢাবিতে ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদ করছে ডাকসু। যে প্রক্রিয়ায় তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ডাকসুর নেতারা গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালান। ডাকসুর নেতারা বলছেন, তারা যাদের উচ্ছেদ করছেন, তাদের অনেকেই মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে। তাদের কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়।

অন্যদিকে এই উচ্ছেদের প্রতিবাদে শনিবার রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন হকার ও খাবারের ছোট ছোট দোকান পরিচালনাকারীরা। তারা বলছেন, ২০-৩০ বছর ধরে তারা ক্যাম্পাসে দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তাদের দোকান চালানোর কোনো ব্যবস্থা না করে হঠাৎ উচ্ছেদ করলে তারা কীভাবে জীবন চালাবেন? তবে প্রশাসন বলছে, বারবার সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও ভাসমানদের ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা ক্যাম্পাস ছাড়তে চান না।

বিষয়টি এখন দুদিক থেকেই জটিলাকার ধারণ করেছে নিঃসন্দেহে। প্রথমত, যেভাবেই হোক ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে ভাসমান হকারদের ভিড় অবশ্যই কমাতে হবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কোনোভাবেই এমন বিশৃঙ্খল হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, যেসব হকার অনেক বছর ধরে এই ক্যাম্পাসের ওপর নির্ভরশীল তারাই-বা এখন হুট করে যাবেন কোথায়?

আবার এ কথাও সত্য যে, হাজার হাজার ভাসমান হকারদের নির্দিষ্ট স্থানও প্রশাসন দিতে পারবে না। এ সমস্যার জন্ম হয়েছে শুরু থেকেই সুষ্ঠ পরিকল্পনা না থাকার কারণে। ঠিক এরকমটা হয়েছে আরো অনেক ক্ষেত্রেই। ঢাকার প্রায় সব ফুটপাত দখল করে রেখেছেন হকাররা, চাইলেও সরকার এখন তাদের উচ্ছেদ করতে পারে না। অটো-রিকশা ভয়ঙ্কর মৃত্যু-ফাঁদ হয়ে গেছে, চাইলেও সরকার এখন তা উচ্ছেদ করতে পারছে না। এগুলো আমাদের সরকারের দূরদর্শিতার অভাবকেই চিহ্নিত করে।

এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হকারদের উচ্ছেদ করতে না পেরে অনেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়টিকেই এখান থেকে সরিয়ে ফেলার প্রস্তাব দিচ্ছেন। মাথাব্যথার জন্য মাথাটিই কেটে ফেলার পরিকল্পনা। হকার উচ্ছেদ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়ে পাল্টাপাল্টি তর্ক-বিতর্ক না করে সুষ্ঠ সমাধান জরুরি। ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে অবশ্যই হকারদের জোর করে উচ্ছেদ করতে পারে, কিন্তু মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের স্থায়ী একটি স্থান দিয়ে এবং কিছুটা সময় দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালু রাখা যায় কি না ভাবতে হবে। ডাকসু ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হঠাৎ করে যেভাবে উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে তাতে মনে হচ্ছে বিশাল কোনো মাফিয়া চক্রকে উচ্ছেদ করতে নেমেছে। আমরা চাই অসহায় মানুষের প্রতি কঠিন না হয়ে প্রশাসন একটু নমনীয় হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ