Views Bangladesh Logo

পুশ ইন ও পুশ ব্যাক বন্ধে কূটনৈতিক সমাধান জরুরি

ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর বিষয়টি বেশ কয়েকদিন ধরেই আলোচনায়। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও গুরুত্বের সঙ্গে খবর প্রকাশ হয়েছে। গত সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে আলজাজিরা একটি মর্মান্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে জানা যায়, আসামের মুসলিম নাগরিকদের আসামের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোর করে ধরে এনে বাংলাদেশের সীমান্তের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়নি। সারা দিন তারা না খেয়ে দাঁড়িয়ে ছিল খোলা মাঠে।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, সিলেট বিভাগের চার সীমান্ত দিয়ে ৫৫ জনকে ঠেলে দিয়েছে (পুশইন) ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত বুধবার সকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা তাদের আটক করে। এ নিয়ে গত ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার চারজনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ। ৪৮ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক জানান, গতকাল ঠেলে পাঠানোদের মধ্যে ৩৩ নারী ও ১০ শিশু রয়েছে।

‘পুশ ইন’ ‘পুশ ব্যাক’-এর কূটনৈতিক সমাধানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ভারত-সরকার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছে। তাতেও এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো সমাধান হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ভারতীয় কাউকে পুশইন করা হলে অবশ্যই ফেরত পাঠানো হবে বলে। গত বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানের মাসব্যাপী ফটোগ্রাফি ও গ্রাফিতি প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর জন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে না। কারণ, ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন যে, বাংলা ভাষাভাষী মানুষকে ভারত থেকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। এটা নিয়ে আমাদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।

যদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এর সমাধানে এগিয়ে আসেন, তাহলে অবশ্যই সমাধানের পথ কিছুটা সহজ হয়; কিন্তু যদি তা না হয় তাহলে বাংলাদেশ আর কী পদক্ষেপ নেবে, তা এখনো অনিশ্চিত। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যদিও বলেছেন, এটা নিয়ে আমাদের বিচলিত হওয়ার কিছু নেই; কিন্তু বিচলিত হওয়ার মতো যথেষ্ট কারণই আছে।

দুহাজার হোক, আর দুজন হোক- এটা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা। আধুনিক সভ্য পৃথিবীতে আমরা কোনো দেশের মানুষকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ দাঁড় করিয়ে রাখতে পারি না। ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশকেই এর কূটনৈতিক সমাধান করতে হবে। বাংলাদেশের ৮ বিভাগের মধ্যে ৬টি সীমান্তই ভারতের সাথে ভাগাভাগি করতে হয়, সাংস্কৃতিক কিছু মিল থাকায় এবং নানা প্রয়োজনে দুদেশের মধ্যে মানব যাতায়াত অনেকটা সহজলভ্য। এক্ষেত্রে ভারত সরকার বেছে বেছে কেবল মুসলিমদের, বিশেষ করে আসামের নাগরিকদের যেভাবে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর, এবং ভারতের পহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার পর থেকে ভারতীয় মুসলিমদের নানা আশঙ্কায় দিন কাটছে। মোদির বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলোতে কর্তৃপক্ষ এই সুযোগে ‘অবৈধ বাংলাদেশ’ এবং ‘রোহিঙ্গাদের’ বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। বলা যায় মোদী সরকার এ নিয়ে এক নতুন রাজনীতি শুরু করেছে। এরকমটা চলতে থাকলে তা যেমন ভারতের জন্যও উদ্বেগের বিষয় হবে, বাংলাদেশের জন্যও চিন্তার বিষয় হবে। দুদেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ বাড়ানো ছাড়া এর কোনো সুষ্ঠু সমাধান নেই। তাই আমরা চাই ‘পুশ ইন’ও ‘পুশ ব্যাক’ সমাধানে বাংলাদেশ সরকার শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কথার ওপর আস্থা করে বসে না থেকে, ভারত সরকারের সাথে আরো জোরালো কূটনৈতিক যোগাযোগ গড়ে তুলুক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ